তিতাসের গ্যাস বিল বকেয়া ১৩ হাজার কোটি টাকা
অর্থ সংকটে পর্যাপ্ত গ্যাসের জোগান দিতে পারছে না সরকার। চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। অথচ নিয়মিত গ্যাস বিল আদায় করতে পারছে না গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, এক তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির অধীনেই প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া পড়েছে। যার অর্ধেকের বেশি গ্যাস বিল জমা খোদ সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তরগুলোর কাছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা গ্যাস বিল আটকে আছে মামলার কারণে। চার হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা গ্যাস গ্রাহকদের কাছে। মেঘনা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছেই গ্যাস বিল জমা পড়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
তিতাস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী কোম্পানিটির গ্যাস বিল জমা পড়েছে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এই বকেয়া গড়ে সাড়ে চার মাসের সমান। তিতাস বলছে, তাদের প্রতিমাসেই বিল হয় দুই হাজার ৯২৫ কোটি টাকার মতো। তাদের সবচেয়ে বেশি বকেয়া সরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশেষ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে, ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ (ইজিসিবি), আইপিপি ও আরপিসিএলের কাছে। তাদের কাছে বকেয়া ৫৯৯৬.৮৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোশেনের (বিসিআইসি) কাছে তিতাসের বকেয়া ৩৭২ কোটি টাকা। তিতাস বলছে, পিডিবি এবং সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৩ মাসের সমান। বিসিআইসির কাছে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬ মাসের সমান। পিডিবি এবং বিসিআইসি মিলে তিতাসের গ্যাস বিল বকেয়া মোট ৬৩৬৮.৩৯ কোটি টাকা।
এদিকে মামলার কারণে চারটি কোম্পানির কাছে তিতাসের পাওনা রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। কোম্পানি চারটির মধ্যে রয়েছে মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধীন এভারেস্ট পাওয়ার যার বকেয়ার পরিমাণ ৭৮১ কোটি টাকা, ইউনাইটেড পাওয়ার কোম্পানি যার বকেয়া ৫৫৬ কোটি টাকা, মেঘনা সুগার রিফাইনারি কোম্পানির ৬৫.২৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য মালিকানাধীন কয়েকটি কোম্পানির কাছে বকেয়া জমা পড়েছে ৯২৪ কোটি টাকা। তিতাস বলছে, এভারেস্ট পাওয়ারের মাসিক গড় বিল ২২ কোটি টাকা। তাদের কাছে প্রায় ৩৬ মাসের গ্যাস বিল বকেয়া পড়ে আছে। ইউনাইটেড পাওয়ারের মাসিক গড় বিল ১৩ কোটি টাকা, তাদের প্রায় ৪১ মাসের গ্যাস বিল বকেয়া, মেঘনা সুগার রিফাইনারির গ্যাস বিল বকেয়া প্রায় তিন মাসের।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
দেশের বিভিন্ন ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে তিতাসের গ্যাস বিল বকেয়া জমা পড়েছে এক হাজার ৬৩ কোটি টাকা, শিল্প মালিকদের কাছে ৭৮৩ কোটি টাকা, বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছে ৮০ কোটি টাকা, সিএনজি গ্রাহকদের কাছে ৬৬ কোটি টাকা, আবাসিক গ্রাহকদের কাছে দুই হাজার ৫৫ কোটি টাকা, মৌসুমি গ্রাহকদের কাছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, দফায় দফায় চিঠি দিয়েও বকেয়া উদ্ধার করতে পারছে না তিতাস। এভারেস্ট পাওয়ারের গ্যাস সংযোগ অনুমোদনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ ছিল। ফলে বকেয়া থাকলেও কেউ আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাহস করত না।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
শুরুতে কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ মেগাওয়াট থাকলেও ৩ বছর পর ২০১৪ সালে ৫০.৭০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। একই সঙ্গে ক্যাপটিভ থেকে স্মল আইপিপি হিসেবে রূপান্তরিত হয়ে যায় এভারেস্ট। কেন্দ্রটি উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও মেঘনা ইকোনমিক জোনে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে থাকে। বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে দেওয়া বিদ্যুতের গ্যাসের বিল আইপিপি রেটে এবং বাইরে বিক্রি করা বিদ্যুতের গ্যাসের বিল ক্যাপটিভ রেটে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বিইআরসির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাপটিভ রেটে গ্যাস বিল প্রদান থেকে বিরত থাকে কোম্পানিটি। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলে অনেক দিন।
এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ পারভেজ বিদেশে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, মেঘনা গ্রুপের কাছে অনেক টাকা বকেয়া। গ্যাসের দর নিয়ে তিতাস এবং মেঘনা গ্রুপের মধ্যে মামলা হয়েছে। তিতাস মামলায় জিতলেও এখনও টাকা পরিশোধ করা হয়নি। উপরের দিকে নানা ধরনের যোগাযোগ থাকায় অনেক কোম্পানির গ্যাসসংযোগ তিতাসের পক্ষে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
অন্যান্য কোম্পানির বিল বকেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জোনাল অফিসের অনেক কর্মকর্তার সদিচ্ছার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। এখানে নানা হিসাব-নিকাশ আছে। তিতাস চেষ্টা করছে সব গ্রাহকের বিল আদায় যেন নিয়মিত হয়।