রুটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পন্টিং
মেজর লিগ ক্রিকেটে কোচিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন রিকি পন্টিং। ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট দিয়েই ফিরে এলেন ধারাভাষ্যকক্ষে। আর ফিরেই যেন ইতিহাসের সাক্ষী! কারণ, এই টেস্টেই তার নিজের রেকর্ড ছাড়িয়ে টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেলেন জো রুট। আর সে মুহূর্তে মাইক্রোফোন হাতে ছিলেন পন্টিং নিজেই!
রুট ভারতের বিপক্ষে এই টেস্টে ব্যাটিংয়ে নামার সময় ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় পঞ্চম স্থানে। তৃতীয় দিনের সকালের সেশনেই পেরিয়ে যান রাহুল দ্রাবিড় ও জ্যাক ক্যালিসকে। এরপর শতরান পূর্ণ করে স্পর্শ করেন কুমার সাঙ্গাকারার ৩৮টি টেস্ট সেঞ্চুরির মাইলফলক।
আর যখন তার রান ১২০ ছুঁয়েছে, তখনই তিনি অতিক্রম করে যান রিকি পন্টিংয়ের ১৩,৩৭৮ রানকে। উঠে যান তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।
ধারাভাষ্যে তখন ছিলেন মাইকেল আথারটন ও রিকি পন্টিং। আথারটন শুরুতে রুটকে অভিনন্দন জানালেও পরক্ষণেই পন্টিং বললেন, ‘অভিনন্দন, জো রুট। অসাধারণ অর্জন। এখন ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ১২০ রানে অপরাজিত। এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের গ্যালারিতে থাকা ক্রিকেটবোধসম্পন্ন মানুষরা দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে...। সামনে এখন কেবল একজনই আছে—আড়াই হাজার রানের মতো দূরে। তবে গত চার-পাঁচ বছরে তার পারফরম্যান্স যেভাবে এগিয়েছে, তাতে এই রেকর্ডও খুব সম্ভব।’
২০১৯ সাল পর্যন্ত রুটের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে না পারা। ৯৭ টেস্টে ছিল ১৭টি সেঞ্চুরি, ৪৯টি ফিফটি, গড় ৪৭.৯৯। এরপর ২০২১ সাল থেকে শুরু হয় এক অবিশ্বাস্য রূপান্তর।
এই সময়ের ৬০ টেস্টে রুট করেছেন ২১টি সেঞ্চুরি ও ১৭টি ফিফটি। ৫৬.৪২ গড়ে রান করেছেন ৫ হাজার ৫৮৬। যেখানে একসময় তার ক্যারিয়ার গড় নেমে গিয়েছিল ৪৮-এর নিচে, সেটি এখন দাঁড়িয়েছে ৫১.১৭-তে।
ধারাভাষ্যে পন্টিং তুলে ধরেন সেই রূপান্তরের কথাই, ‘ক্যারিয়ারের ১৫৭ টেস্টজুড়েই সে দুর্দান্ত এক ব্যাটসম্যান। এতটা ধারাবাহিকতা খুব কম ক্রিকেটারের আছে। গত কয়েক বছরে যখনই সে ফিফটি করেছে, মনে হয়েছে শতরান করবেই—আর শুধু শতরান নয়, বড় শতরান। সেটাই তো সত্যিকারের গ্রেট ব্যাটসম্যানের পরিচয়।’
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রুট থামলেন ১৫০ রানে। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৬তম দেড়শর ইনিংস, যা তাকে এই বিভাগেও এগিয়ে দিল পন্টিংয়ের (১৫টি) ওপরে। এই তালিকায় শীর্ষে আছেন শচীন টেন্ডুলকার (২০টি)। এরপর আছেন লারা ও সাঙ্গাকারা (১৯টি), ডন ব্র্যাডম্যান (১৮টি)।
শুধু রান নয়, টেস্ট সংখ্যার দিক থেকেও রুটের সামর্থ্য প্রশ্নাতীত। মাত্র সাড়ে ১২ বছরে তিনি খেলেছেন ১৫৭টি টেস্ট। যেখানে টেন্ডুলকারকে ২০০ টেস্ট খেলতে লেগেছিল ২৪ বছর। রুটের বয়স এখন মাত্র ৩৪। ইংল্যান্ড নিয়মিত টেস্ট খেলে এবং রুটের ইনজুরির ইতিহাসও তুলনামূলকভাবে কম—তাই টেন্ডুলকারের ১৫,৯২১ রানের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়।
গত বছর রুট খেলেছিলেন ১৭টি টেস্ট। ২০১৭ সালে খেলেছিলেন সমানসংখ্যক। কয়েক বছর ধরে তিনি গড়ে বছরে ১৪–১৫টি করে টেস্ট খেলেই চলেছেন। এই ধারায় রেকর্ডগুলোও যেন এখন তার ব্যাটের নাগালেই!