খেয়ালখুশিমতো ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে সিডিএ

চট্টগ্রাম ব্যুরো
২৬ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
খেয়ালখুশিমতো ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে সিডিএ

অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যক্তিগত জায়গা প্রয়োজন হলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সেসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই মৌখিক আশ^াস দিয়ে মানুষের জায়গায় প্রকল্প গ্রহণ করে চলেছে। এ ছাড়া খেয়াল খুশিমতো ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে তা থেকেও নানা অজুহাতে টাকা কেটে রাখছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নগরীর সিটি আউটার রিংরোড প্রকল্পে কর্ণফুলী টানেলের নগর অংশের উন্নয়নের অংশ হিসেবে বে টারমিনাল নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ। সেখানকার সীমানা দেয়ালসহ অবকাঠামো বে টারমিনালকে ভেঙে দিতে বলে সিডিএ। আর ওই কাঠামোর দাম নির্ধারণ করে ১৩ লাখ ৮ হাজার ৮০১ টাকা। কিন্তু সেখান থেকে ঠিকাদারের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেখিয়ে মোট টাকার ২২ শতাংশ কেটে রাখা হয়। এর বাইরে ভ্যাট সাড়ে ৬ শতাংশ। সীমানা দেয়ালকে পুরনো দেখিয়ে কাটা হয় আরও ছয় শতাংশ। দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছিল নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে- এমন অজুহাত দেখিয়ে কাটা হয় আরও ৫ শতাংশ। এভাবে ধার্য টাকা নানাভাবে নিজেরাই নিয়ে নেওয়ার এক আয়োজন সিডিএ কর্তাদের।

জানতে চাইলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে না। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকলে তা নিয়ে নতুন করে আবেদন করার ব্যবস্থা আছে।

সিডিএর দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের জায়গা দরকার হলে তা অধিগ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হয়। সব নিয়ম মেনে জেলা প্রশাসন তা অধিগ্রহণ করবে। ওই নিয়মে না গেলে সিডিএকে সংশ্লিষ্ট ভূমি বাজার মূল্যে কিনেই সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এটা করতে হবে ভূমির মালিকের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে। এর বাইরে ব্যক্তিগত জমিতে অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ সিডিএর নেই। কিন্তু সিডিএকে পুরোপুরি সরকারি প্রতিষ্ঠান মনে করে সাধারণ জনগণ এসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না। আবার ভূমি অধিগ্রহণ নিয়েও মানুষ আইনি মারপ্যাঁচে যেতে চান না। ফলে জমি অধিগ্রহণের আগেই সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ফেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত দিনে নগরীতে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণসহ নানা প্রকল্প গ্রহণের পর সিডিএকে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ শেষে মৌজা দরের তিনগুণ না পেয়ে কেবল মৌজা দর বা দ্বিগুণ পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ক্ষেত্রে মোট টাকার সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত সিডিএ, জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দালালদের মধ্যে ভাগযোগ হয়। এ নিয়ে ভূমি মালিকের কিছুই করার থাকে না, কারণ ওই জায়গা ততদিনে সিডিএর কব্জায়। তারা সেখানে রাস্তা বা অন্য কাঠামো নির্মাণ করে ফেলেছে।

নগরীর সিটি আউটার রিং রোডের টানেল জংশন উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে সিডিএকে এ ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরুর আগেই নালা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। সেখানে বে টার্মিনাল নামের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভেঙে নিজেদের মতো করে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা আপত্তি জানান। তখন সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়, গণপূর্ত বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিডিএরই একজন কর্মকর্তা জানান, অধিগ্রহণ করার আগে এভাবে কারও জায়গায় হাত দেওয়ার অধিকার সিডিএর নেই।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আমাদের সময়কে বলেন, আমরা বে টারমিনাল ছাড়া অন্য সবার জায়গা নিয়ে ফেলেছি। এই একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান বাকি আছে। জমি অধিগ্রহণ না করলেও বাজেট চলে আসায় আমাদের কাজ শেষ করতে হচ্ছে। আমরা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে প্রকল্প করি না। তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের ক্ষতিপূরণের টাকায় সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে তারা আমাদের কাছে নতুন করে আবেদন করতে পারেন। আমরা আবারও গণপূর্তের মতামত নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করব।