টেলিটকে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েই চলেছে

আব্দুল্লাহ কাফি
২৬ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
টেলিটকে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েই চলেছে

শহর-গ্রামের মধ্যে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার বৈষম্য নিরসনে টেলিযোগাযোগ বিভাগ ‘গ্রামপর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ গত জুন মাসে শেষ হয়েছে। কিন্তু তেমন অগ্রগতি হয়নি। এ সময়ে টাকা খরচ হয়েছে ৪৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। অন্যান্য কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর ব্যয় ব্যতিরেকে সম্প্রতি আবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৭ সালের জুন নাগাদ।

জানা গেছে, ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। এরপর এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। তারপর আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছর জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় ফের ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল- দেশের সব মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করা এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা। ফলে চিকিৎসা, শিক্ষায় টেলি-ক্লাসরুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাওয়া সবার জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, নানা সমস্যার কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। তবে ব্যয় ব্যতিরেকে আগামী দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আশা করা যায়, এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে।

এদিকে সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সম্প্রতি প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, দেশের প্রায় ১৯.২৫ কোটি মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে টেলিটকের গ্রাহক মাত্র ৬৫ লাখ (৩.৩৮%)। অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের ১৪ থেকে ২০ হাজার বিটিএসের তুলনায় টেলিটকের বিটিএস মাত্র ৫ হাজার ৬৬১। বিশ্বে যখন প্রায় ২১০ কোটি লোকের হাতে ৫জি মোবাইল, তখন টেলিটক ২জি, ৩জি ও ৪জি প্রযুক্তির মধ্যে। এ অবস্থায় নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণসহ ৮০ লাখ গ্রাহক ধারণক্ষমতা বাড়াতে টেলিটক চার বছর মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ২৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ৫জি উপযোগী কোর ও ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি স্থাপন, বিদ্যমান ৩২০০ বিটিএস ৪জি-তে আপ-গ্রেডেশন, নতুন ৩০০০ ৪জি বিটিএস স্থাপন, ৫০০ আইবিএস সলিউশন এবং ৫০০০ এফডব্লিউএ ডিভাইস স্থাপন এ প্রকল্পের প্রধান কাজ।

প্রকল্পের কোর ও ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি কেনা হলেও স্থাপন কক্ষ ও ভবন মেরামত/নির্মাণ পর্যায়ে রয়েছে। বিটিএস আপ-গ্রেডেশন অগ্রগতি প্রায় ৭৮ শতাংশ। কিন্তু নতুন বিটিএস স্থাপনে অগ্রগতি ১ শতাংশেরও কম। আইবিএস সলিউশন ও এফডব্লিউএ ডিভাইসের দরপত্র মূল্যায়ন পর্যায়ে। প্রকল্পের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ক্রয় প্যাকেজের তিনটির চুক্তি স্বাক্ষর ডিপিপি মেয়াদে সম্পন্ন হলেও কাজ সম্পন্নের চুক্তিবদ্ধ তারিখ দুই বছর পিছিয়ে ৩০-৬-২০২৫ পুনর্নির্ধারিত। অপর তিনটি প্যাকেজের মধ্যে একটির দরপত্র মূল্যায়ন চলছে এবং দুটির পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়াধীন। মাঠ জরিপ মতামতে প্রকল্পের সুবাদে টেলিটকের নেটওয়ার্ক ও কভারেজ বাড়ছে, কলড্রপ কমছে এবং চাহিদা বাড়ছে। এফজিডি, কেআইআই ও স্থানীয় কর্মশালার মতামতে স্বল্প বিনিয়োগ, অপ্রতুল বিটিএস ও নেটওয়ার্ক, সীমিত ৪জি, দুর্বল ইন্ডোর কভারেজ এসব কারণে নতুন গ্রাহক আকর্ষণ কিংবা বর্তমান গ্রাহক ধরে রাখার ক্ষেত্রে টেলিটক প্রতিদ্বন্দ্বী অপারেটরদের তুলনায় পিছিয়ে আছে।

এ প্রকল্পের দুর্বল দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুর্বল সম্ভাব্যতা যাচাই, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ও বাস্তবায়নে দুর্বলতা, বিলম্বে জনবল নিয়োগ ও আরডিপিপি অনুমোদন, ক্রয় প্রক্রিয়া ও স্থাপন কাজে ধীরগতি, প্রয়োজন অনুসারে প্রকল্পের অর্থবরাদ্দ ও অর্থছাড় না হওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া ঝুঁকি হলো নেটওয়ার্ক, গ্রাহক ফোকাস, মার্কেট শেয়ার প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে দুর্বল অবস্থান, স্যাচুরেটেড মার্কেট, টাওয়ার শেয়ারিং দরপত্র বারবার সফল না হওয়া, যন্ত্রপাতির ব্যবহারযোগ্য আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

শেষ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৪৪.২৩ শতাংশ। অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনে অগ্রগতি কম। টাওয়ার শেয়ারিং জটিলতায় নতুন বিটিএস স্থাপনে সৃষ্ট অচলাবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রলম্বিত হওয়ার আশংকা আছে। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে সঠিক পরিকল্পনার অভাব লক্ষ্যণীয়। ক্রয় প্রক্রিয়ায় ‘পোর পার্টিসিপেশন’ থাকায় সেরা দরদাতা এবং উপযুক্ত পণ্য বাছাই করার সুযোগ কম থাকছে। প্রতিদ্বন্দ্বী অপারেটরদের সমকক্ষতা অর্জনে নিজস্ব টাওয়ার স্থাপন, দেশজুড়ে পর্যাপ্ত বিটিএস ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থাপনা, প্রচার-প্রচারণা এবং গ্রাহকসেবার মান বাড়ানো জরুরি।