লোকসান দেখিয়ে আলুর দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা
গত বছর এমন সময় বাজার কাঁপিয়েছিল আলুর আকাশচুম্বী দাম। সস্তা পণ্য হিসেবে পরিচিত আলু তখন বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৭০ টাকা। এ বছর ভালো উৎপাদন ও সরবরাহ থাকায় প্রতি কেজি ২০ টাকায় কেনা গেছে। কিন্তু এখন দাম বাড়তে শুরু করেছে। মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি অন্তত ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকা হয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এর মধ্যেই আলুর পাইকারি দাম বাড়াতে চাচ্ছেন হিমাগার মালিকরা। তারা বলছেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারমূল্য কম হওয়ায় কৃষকের লোকসান হচ্ছে। আলুচাষিদের বড় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
হিমাগার গেটে আলুর দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। গত ২০ জুলাই পাঠানো ওই চিঠির অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও দেওয়া হয়েছে। হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ২০২৪ সালে আলুর দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন আলু উৎপাদন করেছেন। এবার চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪০ লাখ
টন বেশি উৎপাদনের ফলে হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলু ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৭ টাকা এবং হিমাগারের ভাড়া যোগ করলে দাঁড়ায় ২৫ টাকা। এতে কৃষকরা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। তাই তাদের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হিমাগার গেটে আলুর কেজি ২৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, কৃষকের মোট খরচের তুলনায় কেজিতে প্রায় ১০-১২ টাকা কম দামে হিমাগার গেটে আলু বিক্রি হচ্ছে। হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৫ টাকা নিশ্চিত করতে না পারলে কৃষকরা বড় লোকসানে পড়বেন। সেই সঙ্গে চাষিরা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। গত বছরের চেয়ে এবার ১০ লাখ টন আলু বেশি আছে। অন্তত ৫ লাখ টন আলু ওএমএস ও ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিক্রি করে সমন্বয় না করলে আগামীতে আলুর বাজারে ২০২৪ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।
জানা গেছে, দেশে মূলত শীত মৌসুমে আলু উৎপাদন হয়। এ সময় উৎপাদনের একটি অংশ কৃষকরা বাজারে নতুন আলু হিসেবে বিক্রি করে দেন। এর পর মার্চ মাস থেকে কৃষক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু মজুদ করেন, যা বছরজুড়ে হিমাগারের ফটকে পাইকারি বিক্রি হয়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, হিমাগারে থাকা আলুর খুব কম অংশই কৃষকের হয়ে থাকে। কারণ তারা ক্ষেত থেকেই ব্যাপারীদের কাছে আলু বিক্রি করে দেন।
হিমাগার মালিকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, আলুর সরবরাহ ব্যবস্থায় নানা বিশৃঙ্খলা রয়েছে। ক্ষেত থেকে আলু কৃষকের হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে কয়েক হাত বদল হয়ে তা হিমাগারে পৌঁছায়। এর মধ্যে হিমাগারের কমিশন এজেন্টরা রয়েছেন, যারা কৃষকের কাছ থেকে আলু সংগ্রহ করেন। হিমাগারে যে আলু থাকে, তার বেশিরভাগের কাগজপত্র ঘাঁটলে দেখা যাবে প্রকৃত কৃষকের সংখ্যা কম। তার ওপর আলু হিমাগারে থাকা অবস্থায় স্লিপ (রসিদ) কেনাবেচা হয়। এক হাত থেকে আরেক হাতে মালিকানা ঘোরে। এর পর তা বাজারে আসে। বাজারে দাম বাড়লে কৃষকদের লাভবান হওয়ার কথা। সেটা হলে তো ভালো হতো। কিন্তু এখন দাম বাড়লে তাতে প্রকৃত কৃষক নয়, বরং মধ্যস্বত্বভোগীরাই বেশি লাভবান হবে। এই অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও মধ্যস্বত্ব¡ভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে আগে। তা হলেই কৃষকরা উপকৃত হবেন।
এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে আলুর দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লাল আলু এখনও ২০ টাকায় মিলছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, গতকাল খুচরা পর্যায়ে আলু কেজি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গত মাসে যা বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন