মার্কিন পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশের তোড়জোড়
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মার্কিন ক্রেতারা নতুন আদেশ নিয়ে আলোচনা প্রায় স্থগিত করে দিয়েছেন। এ ছাড়া ইতোমধ্যে যেসব পণ্যের চালান পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে, সেগুলোর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে বাড়তি খরচের একাংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদেরকে ভাগ করে নিতে বলছে তারা। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে আগের প্রায় ১৬ শতাংশ এবং নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্কসহ বেশিরভাগ বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫১ শতাংশ। শিল্প খাতের নেতারা আশঙ্কা করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর বাংলাদেশের মোট রপ্তানির একটি বড় অংশ নির্ভর করে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়। এর সঙ্গে জড়িত আরও প্রায় ১৫-১৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। তাই এ সমস্যার সমাধান সঠিকভাবে না করা গেলে শুধু রপ্তানি খাত নয়, এর সঙ্গে কর্মসংস্থান, শিল্প ও সেবাখাতেও প্রভাব পড়বে। বিষয়টি মাথায় রেখেই তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটা অবস্থানপত্র তৈরির কাজ চলছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কহার ইস্যুতে দরকষাকষি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে দেশটি যেসব শর্ত দিয়েছে, মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত নিয়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আমাদের যে আলোচনা চলছে, সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো রয়েছে। ফলে মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত আমাদের নিতে হচ্ছে। মতামত নেওয়ার পর একটা প্রস্তাব ফাইনাল করে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হবে।
আরও পড়ুন:
‘হামাসকে ধ্বংস করা যাবে না’
স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক: ৯ থেকে ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে গত রবিবার দেশে ফিরে সোমবার অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অর্থ, কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ, জ্বালানিসহ ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন বৈঠকে।
বৈঠকসূত্রে জানা যায়, শুল্কহার কমানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত বাংলাদেশকে দিতে চায়, সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আগামী কয়েক দিন পর্যায়ক্রমে এ বৈঠক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনায় দেশটির দেওয়া শর্তগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মতামত দিতে হবে। তার আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য বড় ধরনের অভিঘাত বলে আমরা গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছি। কিছু কাজ করা হয়েছে, আরও কিছু করতে হবে। তার অংশ হিসেবেই আজ আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আমাদের যে আলোচনা চলছে, সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো রয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামত আমাদের নিতে হচ্ছে। এমন বৈঠক এখন চলতে থাকবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে একটা প্রস্তাব ফাইনাল করে আবার আলোচনা হবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অন্যদিকে গতকাল বিকালে জুম প্ল্যাটফর্মে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরনের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গেও বৈঠক করেন। আগামী ২২ জুলাই আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
জানা গেছে, বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে অনেকাংশে একমত হলেও বাণিজ্যের বাইরের অনেক বিষয় এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দরকষাকষি পর্যায়ে আটকে আছে।