লারার সম্মানেই কি ৪০০ ছোঁয়ার চেষ্টা করেননি, যা বললেন মুল্ডার
বুলাওয়ায়ো টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেও ব্যক্তিগত রেকর্ডের চেয়ে দল ও কিংবদন্তিকে সম্মান জানানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক উইয়ান মুল্ডার। ৩৬৭ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় ইনিংস ঘোষণা করে তাক লাগিয়ে দেন ক্রিকেটবিশ্বকে। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে লাঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৫ উইকেটে ৬২৬ রানে।
মুল্ডারের ৩৩৪ বলের দুর্দান্ত ইনিংসে ছিল ৪৯টি চার ও ৪টি ছক্কা। তার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ছোঁয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে তিনি ব্যাট চালিয়ে যাওয়ার বদলে দলকে এগিয়ে রাখতে এবং লারাকে সম্মান জানাতে ইনিংস ঘোষণা করেন।
ম্যাচ শেষে কিংবদন্তি পেসার ও ধারাভাষ্যকার শন পোলকের প্রশ্নে মুল্ডার বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট রান করে ফেলেছি। আর লারা একজন কিংবদন্তি। আমার মনে হয়, টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তার নামেই থাকা উচিত। ভবিষ্যতে এমন সুযোগ আবার পেলে আমি একই সিদ্ধান্ত নেব।’
এই ইনিংসের মাধ্যমে মুল্ডার ইতিহাস গড়েছেন একাধিকভাবে। টেস্ট ইতিহাসে তিনিই প্রথম অধিনায়ক, যিনি অধিনায়কত্বের অভিষেকে ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন। পাশাপাশি হাশিম আমলার ৩১১ রানের রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিকও এখন তিনি।
অভিষেক ম্যাচে এমন অর্জনের পরও মাটিতে পা রাখা এই অলরাউন্ডার অকপটে বলেন, ‘আমি কখনও ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্নও দেখিনি। ট্রিপল তো আরও দুরের কথা। তবে সবচেয়ে বড় তৃপ্তি দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারা।’
মুল্ডার স্মরণ করলেন ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোর কথা, যখন তাকে নিয়মিত সাত বা আট নম্বরে ব্যাট করতে হতো। ২০১৯ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেকের পর কয়েক বছর সীমিত সুযোগ পেয়েছিলেন। গত বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সাত নম্বরে নেমেই প্রথম সেঞ্চুরি করেন। এরপর তিন নম্বরে উঠে আসেন এবং ধারাবাহিক উন্নতি শুরু করেন।
মনসংযোগ ধরে রাখতে কী করতেন, সেটিও জানালেন হাসিমুখে। ২৪৭ রানে ‘বোল্ড’ হলেও ‘নো’ বলের কারণে বেঁচে যাওয়ার সেই নাটকীয় মুহূর্তের কথা টেনে বলেন, ‘মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবে নিজেকে সামলে রাখতে দুই বলের মাঝখানে নিজের পছন্দের গান গাইছিলাম, সেটাই আমাকে স্থির থাকতে সাহায্য করছিল।’
এই ইনিংসের সময় হাশিম আমলার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার মুহূর্তও প্রথমে টের পাননি বলে জানান তিনি। ‘বাংলাদেশে প্রথম সেঞ্চুরির সময়ও আফ্রিকান গান গেয়েছিলাম। আজও মাঝে মাঝে গেয়ে মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।’
মুল্ডারের এমন আত্মত্যাগী সিদ্ধান্ত এবং অসাধারণ ইনিংস টেস্ট ক্রিকেটে শুধু নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো না, ব্রায়ান লারার প্রতি এক অনন্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপনও হয়ে থাকল।