অনুসন্ধান মামলা চার্জশিট বেড়েছে, কমেছে সাজা
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বশেষ গত বছর (২০২৪) দুর্নীতির অভিযোগসংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান, মামলা, চার্জশিট বাড়লেও কমেছে বিচারিক আদালতের সাজার হার। সংস্থাটির এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর সর্বোচ্চসংখ্যক ১ হাজার ৮৯৪টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিয়েছে; যা আগের বছরের (২০২৩) তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মনিটনিং বাড়ানোর পাশাপাশি অনুসন্ধান-তদন্তে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করাই মামলা ও আদালতে দাখিল করা চার্জশিটের সংখ্যা বেড়েছে। তবে সাজা কমে যাওয়ার বিষয়ে কমিশন কারণ খুঁজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে দুদকে দুর্নীতি সংক্রান্ত মোট ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ জমা পড়ে, এর মধ্যে ৮২২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া আরও ২ হাজার ৪৬৯টি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়।
এরপর ২০২১ সালে ১৪ হাজার ৭৮৯টি অভিযোগ জমা পড়ে, এর মধ্যে ৫৩৩টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। ২ হাজার ৮৮৯টি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ২০২২ সালে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ জমা পড়ে, এর মধ্যে ৯০১টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। আর ৩ হাজার ১৫২টির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে দুদক।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অপরদিকে, ২০২৩ সালে দুদকে ১৫ হাজার ৪৩৭টি অভিযোগ জমা পড়ে, এর মধ্যে ৮৪৫টি অভিযোগ গ্রহণ করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; আর ৯১৩টির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। সর্বশেষ গত বছর (২০২৪) ১৫ হাজার ৮৪২টি অভিযোগ জমা পড়ে; এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৯৪টি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ ছাড়া আরও ১ হাজার ১২টি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।
আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৫৩০ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে দুদক।
অপরদিকে ২০২০ সালে ৩৪৮টি মামলা দায়ের করে দুদক। এরপর ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২৩ সালে ৪০৪টি এবং গত বছর (২০২৪) সর্বোচ্চ ৪৫১টি মামলা করা হয়। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২৫৫টি মামলা করে দুদক।
আর ২০২০ সালে বিভিন্ন মামলার মধ্যে থেকে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে ২২৮টি। পরের বছর ২০২১ সালে ২৬০টি, ২০২২ সালে ২২৪টি, ২০২৩ সালে ৩৬৩টি এবং গত বছর (২০২৪) ৪০৩টি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১৭৫টি চার্জশিট দাখিল করা হয়।
দুদকের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাঁচ বছরের মধ্যে গত বছর (২০২৪) বিচারিক আদালতে বিভিন্ন মামলার দেওয়া রায়ে সাজার হার কমেছে। ২০২০ সালে সাজার হার ৭২ শতাংশ, ২০২১ সালে ৬০ শতাংশ, ২০২২ সালে ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৬৭ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং সর্বশেষ গত বছর (২০২৪) সাজার হার কমে দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশে।
দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, বিগত পাঁচ বছরে কমিশন কর্তৃক অনুমোদনকৃত চার্জশিটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে চার্জশিট অনুমোদনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কমিশন থেকে তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, তদারককারী কর্মকর্তাদের মনিটরিং জোরদার ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের ফলে চার্জশিট বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তিনি বলেন, যেসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়ে থাকে, ওইসব অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের অগ্রগতি জানার জন্য (মনিটরিং) কমিশন থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন