প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতি আসছে

বিবেচনায় অতিরিক্ত সচিব যুগ্ম সচিব ও উপসচিব ।। সচিব পদে আসছে চমক

তাওহীদুল ইসলাম
০৮ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতি আসছে

প্রশাসনে আরেক দফা পদোন্নতি আসছে। অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতির কাজ করছে সরকার। অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আনা হয়েছে বিসিএস (প্রশাসন) নিয়মিত ২০ ব্যাচকে। যুগ্মসচিব হবেন ২১, ২২ ও ২৪ ব্যাচের বঞ্চিত কিছু কর্মকর্তা। আর ৩০ ব্যাচ থেকে এবার উপসচিব করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম পর্যায়ে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদোন্নতি চূড়ান্ত করা হতে পারে। এর মধ্যে কয়েকজনকে সচিব পদে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে। তবে ২০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা পলাতক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে রাতের ভোটের কারিগর হিসেবে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। একই সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের পদোন্নতির বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) এরফানুল হক আমাদের সময়কে বলেন, পদোন্নতি নিয়ে কাজ চলছে। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

জানা গেছে, সচিব হিসেবে বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক একটা অংশ কর্মরত রয়েছেন। অনেকে আছেন ওএসডি হিসেবে। এমন বাস্তবতায় সচিব পদে পদোন্নতির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে একাধিক ফোরামে। কিন্তু গত ১৫ বছরে কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশ সরকারি কাজের পরিবর্তে দলীয় কর্মীর পরিচয় বেশি দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ব্যস্ত ছিলেন বিগত সরকারের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে। কেউ কেউ গেল সরকারের কাছের কর্মকর্তা প্রমাণে নানা বন্দনার বই লিখতে ব্যস্ত ছিলেন।

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর তাদের একটা অংশকে দায়িত্ব দিতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। সেই সময় বেশ সমালোচনায় পড়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর জেরে প্রজ্ঞাপন জারির পর কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। অনেককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিবসহ বিভিন্ন স্তরে একই সমস্যা দেখা দেয়। ফলে প্রশাসনের গতিতে ভাটা পড়ে।

এদিকে পটপরিবর্তনের ফলে দুর্নীতি বা নারীঘটিত কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও সুযোগ বুঝে নিজের বঞ্চিত দাবি করে বসেন। কেউ কেউ পদোন্নতি বাগিয়ে নেন নিজেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরোধী প্রচার করে। বাস্তবে দেখা গেছে, এদের অনেকের বিরুদ্ধে প্রকল্প, মাঠ প্রশাসন বা বিভিন্ন স্থানে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ রয়েছে। এবার সে কারণে বেশ সতর্ক সরকার। গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।

এবার সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ১৩ ও ১৫ ব্যাচ থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন এসএসবি এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। দুর্নীতির অভিযোগ, সরকারি কাজের পরিবর্তে দলীয় নেতাদের আনুগত্যের চেষ্টা, নৈতিক স্খলন এসব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির পর বিতর্কের সুযোগ না দিতে রয়েছে বাড়তি তৎপরতা। সচিব পদে পদোন্নতির পাশাপাশি উপসচিবে বিসিএস (প্রশাসন) নিয়মিত ৩০ ব্যাচ, যুগ্ম সচিবের জন্য ২১, ২২ ও ২৪ ব্যাচ এবং ২০ ব্যাচের নিয়মিত কর্মকর্তারা হবেন অতিরিক্ত সচিব। যুগ্ম সচিব প্রত্যাশীদের বিষয়টি হচ্ছে- অনেকে নানা তদবিরে সর্বশেষ পদোন্নতি পেয়েছেন। বিতকির্তরা ঠাঁই পেলেও কেউবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জায়গা পাননি। তাই এবার পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের কর্মজীবন, পারিবারিক তথ্য, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, গোয়েন্দা তথ্য ইত্যাদি চুলচেরা পর্যালোচনা চলছে।

সূত্রমতে, বিসিএস ২০তম ব্যাচে ১৩০ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির বিবেচনায় আনা হতে পারে। পাশাপাশি কিছুসংখ্যক বঞ্চিত ১৭ ও ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় আনা হতে পারে। হাসিনার আমলে যেসব কর্মকর্তা রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত ছিলেন, তাদের এরই মধ্যে ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এবার নতুন পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাদার, দল নিরপেক্ষ ও সৎ কর্মকর্তারা গুরুত্ব পাচ্ছেন।