রোমাঞ্চকর জয়ে বৃত্ত ভাঙল টাইগাররা
জয়টা হাতের মুঠোয় ছিল। টানা ৭ ম্যাচের হারের বৃত্ত ভাঙতে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বহুল প্রত্যাশিত জয়টা সহজে এলো না। বাধা হয়ে উঠেছিলেন জানিথ লিয়ানাগে। লেজের লড়াইয়ে টাইগারদের প্রায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলংকার মিডল অর্ডার ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত পথের কাঁটা সরিয়ে দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। কলম্বোতে দল পেয়েছে রোমাঞ্চকর এক জয়। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে ওয়ানডে সংস্করণের অধিনায়ক হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজ পেয়েছেন স্বস্তির জয়ের দেখা। জয়ের অন্যতম নায়ক তানভির ইসলাম।
অনেক দিন ধরেই অবশ্য ওয়ানডে ক্রিকেটে বাজে সময় কাটছিল বাংলাদেশের। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বর নেমে গেছে টাইগাররা। অবশেষে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে দল। ১৬ জনের জয়ে সিরিজও বাঁচিয়ে রাখলেন মিরাজ অ্যান্ড কোং। এই জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ (১-১)। আগামী মঙ্গলবার পাল্লেকেলেতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের ২৫ বল বাকি থাকতে ২৪৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ম্যাচের ৭ বল আগেই ২৩২ রানে লংকানদের গুঁড়িয়ে দেয় টাইগাররা। এই জয়ে বড় কৃতিত্ব পাবেন বাঁহাতি স্পিনার তানভির। তাকে শুক্রবার রাতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পরদিন মাঠেই জবাবটা দিলেন তানভির। ১০ ওভারে দুই মেডেনসহ ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে লংকানদের ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি। ২৮ বছর বয়সী তানভিরের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠাটা অবধারিতই ছিল। ৩৪ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। তবে ভয় পাইয়ে দেওয়া লিয়ানাগের উইকেটটা পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফিজের বাউন্ডার বুঝে উঠতে পারেননি লংকান ব্যাটার। সহজ ক্যাচ তুলে দেন বাঁহাতি পেসারের হাতে। ৮৫ বলে ৭৮ রানে বিদায় নেন লিয়ানাগে। তার আউটেই শেষ হয়ে যায় লংকানদের জয়ের স্বপ্ন।
অথচ রান তাড়ায় কক্ষপথেই ছিল শ্রীলংকা। দশম ওভার পর্যন্ত ১ উইকেটে ৭৫ রান তুলে ফেলেছিল স্বাগতিকরা। এরপরই তানভিরের আঘাত। তার ঘূর্ণি বিষে নীল হতে থাকে লংকানরা। নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে তারা। আসা-যাওয়ার মিছিলের ফাঁকে হাফসেঞ্চুরি করেন উইকেট রক্ষক-ব্যাটার কুশল মেন্ডিস। ৫৬ রানে ফেরেন তিনি।
৩৩ রানে আউট হন কামিন্দু মেন্ডিস। এ ছাড়া ওপেনার নিশান মদুশঙ্ক ১৭ ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১৩ রানে আউট হন। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার ফাঁকে একপ্রান্ত আগলে রেখে লংকানদের উইকেটের রাশ টেনে ধরেন লিয়ানাগে। লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লেজের লড়াই চালিয়ে যান এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। একটা পর্যায়ে লংকানদের জয়ের আশাও জাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাগতিকদের জয়ের আশা রূপ নিয়েছে বিষাদে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অথচ ১৭০ রানে শ্রীলংকার ৮ উইকেট তুলে নিয়ে সহজ জয় দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ধীরে ধীরে টাইগারদের জয়ের পথ কঠিন করে তোলেন লিয়ানাগে। তাকে যোগ্য সঙ্গই দিয়েছেন দুষ্মন্ত চামিরা। নবম উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। এই জুটি ত্রাস ছড়িয়েছিল। ভাগ্যিস মোস্তাফিজ ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন! লিয়ানাগের আউটে কার্যত শেষ হয়ে যায় লংকানদের জয়ের স্বপ্ন। চামিরার অব স্টাম্প উড়িয়ে শাপমোচন করেন আগের বলেই ক্যাচ মিস করা সাকিব। শূন্যে বল তুলে দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন ১৩ রান করা চামিরা।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। যেখানে মুখ্য ভূমিকা রাখেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয়। দুজনই পেয়েছেন ব্যক্তিগত ফিফটি। ৬৭ রান করেন ইমন। হৃদয় ফেরেন ৫১ রানে। দুজনই খরচ করেন সমান ৬৯ বল। শেষ দিকে ২১ বলে ৩৩ রানে অজেয় থাকেন তানজিম হাসান সাকিব। এ ছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত ১৪, শামীম হোসেন পাটোয়ারী ২২, জাকের আলি অনিক ২৪ রান করেন। অফ-ফর্মের কারণে একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে লিটন কুমার দাসকে। লংকান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল পেসার আসিথা ফার্নান্দো; ৯ ওভারে ক্যারিয়ার সেরা ৩৫ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। ৬০ রানে ৩টি শিকার স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার। যা বিফলেই গেছে। তাদের ম্লান করে দেন তানভির। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট সিরিজ থেকে তাকে বাদ দেওয়ার যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন সেটি আরেকবার পুনর্বিবেচনার দাবিটা ভালোভাবেই জানিয়ে রাখলেন এই স্পিনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২৪৮/১০ (৪৫.৫ ওভার)।
শ্রীলংকা : ২৩২/১০ (৪৮.৫ ওভার)।
ফল : বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : তানভির ইসলাম (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতায় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন