জানুয়ারিতে বই বিতরণ নিয়ে চ্যালেঞ্জ

এম এইচ রবিন
০৬ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
জানুয়ারিতে বই বিতরণ নিয়ে চ্যালেঞ্জ

আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। চলতি বছরের বই বিতরণে ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি এড়াতে আগেভাগে কাজ শুরু করলেও প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব সংকট পুরো প্রক্রিয়াকে স্থবির করে দিয়েছে। চেয়ারম্যানসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা, আর অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর ভরা মৌসুমে এনসিটিবির কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত ২৫ মার্চ চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে পদটি শূন্য। এর পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের সদস্য, মাদ্রাসা শাখার ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ, গবেষণা কর্মকর্তা এবং আইসিটি সেলের প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা।

এই নেতৃত্বহীনতার কারণে টেন্ডার মূল্যায়ন, পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তকরণ এবং কাজের স্বচ্ছ বণ্টনের মতো জরুরি বিষয়গুলো থমকে আছে। ছোটখাটো সিদ্ধান্তের জন্যও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে, যা প্রক্রিয়াকে করছে আরও ধীরগতি। ফলে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দেশের সব কেন্দ্রে বই পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একক কর্তৃত্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণের শঙ্কা : নিয়মিত চেয়ারম্যান না থাকায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম বিভাগের সদস্য অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী একাই পালন করছেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চেয়ারম্যানের পদে আছেন এবং পদাধিকারবলে প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বিভাগের সদস্যের দায়িত্বও তার কাঁধে পড়েছে।

একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, একজন ব্যক্তির হাতে তিনটি শীর্ষ পদের ক্ষমতা থাকায় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বোর্ডের একজন সাবেক চেয়ারম্যান এই পরিস্থিতিকে ‘খেলোয়াড় যিনি, রেফারিও তিনিই’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বোর্ড সভা না হওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আটকে আছে এবং কিছু ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপের কথা স্বীকার করে আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি এই দায়িত্ব চেয়ে নিইনি, সরকার দিয়েছে। শূন্য পদে নিয়োগ হলে আমাকে আর এই চাপ নিতে হবে না।’ তিনি কোনো ধরনের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের নজরে আছে এবং দ্রুত একজন নিয়মিত চেয়ারম্যান নিয়োগের চেষ্টা চলছে।

সচিব সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও এনসিটিবির কর্মকর্তারা মনে করছেন, কেবল আশ্বাস নয়, জরুরি ভিত্তিতে শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া না হলে আগামী বছরও বই বিতরণে বিপর্যয় ঘটার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।