বর্ষপূর্তিতে বিএনপির ৩৬ দিনের কর্মসূচি
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিএনপি। শহীদদের স্মরণে ব্যাপক পরিসরে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন করবে দলটি। আজ কর্মসূচি শুরুর প্রথম দিনে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্যের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। এ ছাড়া জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) আজ থেকে ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আজ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনাসভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ৬৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অনুষ্ঠানে থাকবেন।
বিএনপি গঠিত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, মঙ্গলবার (আজ) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে যে কর্মসূচি রয়েছে, প্রত্যাশা করছি সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা থাকবে। সেখানে জাতীয় নেতারা ছাড়াও অন্যান্য সমমনা দলের নেতৃবৃন্দ এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা থাকবেন।
বিএনপির সিনিয়র এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে বিএনপিরই শহীদ হয়েছেন ৪২৩ জন। এ সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। অঙ্গসহযোগী সংগঠন মিলিয়ে এই সংখ্যা আরও বেশি। অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতসহ সাড়ে ১৫ বছরে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, প্রতিনিয়ত আমরা তাদের পরিবারের খোঁজ নেই এবং সহযোগিতা করছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন ঈদে তাদের বাসায় ছুটে যান নেতারা। তাদের সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ রাখা হয়। একটা ফ্যাসিস্টকে পতনের জন্য জীবনপণ লড়াই করেছে সবাই। এ আন্দোলনে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন থেকেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আমরা সব সময়ই তাদের পাশে আছি এবং থাকব।
বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুয়ায়ী, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থক শহীদ হয়েছেন ৪২৩ জন। ছাত্রদলের শহীদ ১৪৪ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামও এই সংগঠনের নেতা ছিলেন। এ ছাড়া শ্রমিক দলের শহীদ ৭২ জন, যুবদলের ৭১ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শহীদ হন ২৪ জন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন, তাদের পাশে থাকতে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে একটি সেল গঠন করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সেলের প্রধান উপদেষ্টা হলেন রুহুল কবির রিজভী। এই সেলের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন। তিনি বলেন, ‘গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সব সময় সহযোগিতা ও খোঁজ রাখছে- ‘আমরা বিএনপি পরিবার’। একই সঙ্গে ৫ আগস্টের পর থেকে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের সহযোগিতার জন্য আমরা পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সারাদেশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে বহু পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ছুটে গেছি শহীদ ও আহতদের বাসায়। আমরা সব সময় খোঁজ রাখছি।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪৪ জন শহীদ হয়েছেন। ১২ জুলাই ছাত্রদলের উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময়সভা রয়েছে। আশা করছি সেখানে শহীদ পরিবারের সবাই থাকবেন।’
এদিকে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনের কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। বিজয় মিছিল, মৌন মিছিল, ছাত্র সমাবেশ, আলোচনাসভা, সেমিনার, রক্তদান, গ্রাফিতি অঙ্কন, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্ট, শিশু অধিকারবিষয়ক অনুষ্ঠান, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ অন্তত ২২টি ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান’ স্মরণ করবে দলটি। সোমবার (গতকাল) রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ৩৬ দিনের এ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালনে বিএনপি গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উপকমিটিও করা হয়েছে। এসব কমিটিতে থাকা নেতারা কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। নানা নির্দেশনা পালন করছেন।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জামায়াতের ঘোষণা অনুযায়ী, জুলাই আহত শহীদদের জন্য দোয়া, ৮-১৫ জুলাই আহত নিহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ১৬ জুলাই আবু সাঈদ দিবস দোয়া মাহফিল, ১৯ জুলাই মহাসমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, ২৫ থেকে ২৮ জুলাই ডকুমেন্টস প্রকাশ, ২৯ জুলাই আলোচনাসভা, ১ আগস্ট জাতীয় সেমিনার। ১ থেকে ৩ আগস্ট আলোকচিত্রী কর্মসূচি, ৫ আগস্ট দেশব্যাপী গণমিছিল, ৬ থেকে ৮ আগস্ট পেশাজীবী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে। এ সময় দেশব্যাপী গণমিছিল পালন এবং রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবে বলে জানান জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার।
কর্মসূচি ঘোষণা করে গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে আগামী ১ থেকে ৩০ জুলাই দেশের সব জেলায় জুলাই পদযাত্রা হবে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। ১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই পদযাত্রা শুরু হবে। এই সময়ে আমরা শহীদ পরিবারদের কাছে যাব। তাদের কবর জিয়ারত করব। আহত যোদ্ধা ও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলব। জুলাই নিয়ে তাদের আকাক্সক্ষার কথা শুনব। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা একসঙ্গে এই পদযাত্রা করবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জুলাই পদযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি পুরো পদযাত্রা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে কমিটির আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়কে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কোন রুটে, কোন জেলায় পদযাত্রা হবে, তার বিস্তারিত আমরা সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে জানিয়ে দেব। এ ছাড়া ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস উদযাপনেরও ঘোষণা দিয়েছে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম জানান, আগামী ১৬ জুলাই যেদিন আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন, সেদিনকে বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এদিন সারাদেশে শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ করার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী একদফা ঘোষণা হয়েছিল। চলতি বছর ওই দিনটিতে শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা করতে পারেনি। ইতোমধ্যে সরকারের দেওয়া ৩০ কার্যদিবস পার হয়ে গেছে। তাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি করা হবে। জুলাই পদযাত্রায় সারাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার কথা শুনে আমরা আগস্টে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ইশতেহার পাঠ করব। আর ৫ আগস্ট আমরা ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস উদযাপন করব।