রূপপুরের বিদ্যুৎ গ্রিডে যোগ হওয়া নিয়ে সংশয়
দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে কবে যুক্ত হবে সেটি নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও চলতি বছরের মধ্যে যুক্ত হওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। সঞ্চালন ও সরবরাহের কাজে যুক্ত একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) তাদের গ্রিড লাইন বাস্তবায়ন করলেও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘ দিন একপেশে বক্তব্যে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে মূল প্রকল্প তৈরি। গ্রিড লাইন না হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে দেরি হচ্ছে। এখন গ্রিড লাইন রেডি থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন আরও সময় লাগবে প্রকল্পটি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে।
বাংলাদেশের আর্থিকভাবে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার হিসেবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট।
পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রশীদ আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের গ্রিড লাইন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রকল্প থেকে চাইলে যে কোনো সময় অন্তত ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। তবে দুটো ইউনিটের ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে আরেকটি গ্রিড লাইন করা হচ্ছে। সেটা আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে রূপপুর প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের অনেক কাজ এখনও বাকি আছে। সেখানে ৪০০ কেভি থেকে সঞ্চালনের জন্য ২৩০ কেভির একটি সাবস্টেশন এবং ট্রান্সফরমার এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া আরও অনেক টেকনিক্যাল কাজ বাকি আছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, স্টার্ট আপ হওয়ার পরেও তিন মাস সময় লাগে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, পুরো বিষয়টি রাশিয়ান কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করছে। তারা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না কবে থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে।
রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্মিত সঞ্চালন লাইন চলতি মাসের ২ তারিখে চালু করেছে সরকারের প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ। সঞ্চালন লাইন চালুর দুই মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। তবে সেটি আরও কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টি চলতি বছর ডিসেম্বর অথবা পরের বছরেও গড়াতে পারে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সময়মতো উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রূপপুরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সময় বারবার পেছাচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। সেটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। এখন আরও পেছাচ্ছে। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। সেটা পিছিয়ে ২০২৫ সালে নেওয়া হয়েছিল। তবে এই ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে ২০২৭ সালে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। গত বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সেপ্টেম্বরে চুল্লির ভেতর ‘ডামি’ জ্বালানি প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সঞ্চালন লাইন তৈরি হয়েছে। এর দুই মাস পর চুল্লিতে পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। জ্বালানি প্রবেশে এক মাস সময় লাগে। এরপর কিছু কিছু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। একই সঙ্গে চলবে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে আগামী বছর। তবে এটা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।