বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর টাকা ধারে রেকর্ড

জিয়াদুল ইসলাম
২৯ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর টাকা ধারে রেকর্ড

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর টাকা ধারে রেকর্ড হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রেপো ও বিশেষ তারল্য সহায়তা হিসেবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিমাণ অর্থ চলতি অর্থবছরের কোনো মাসেই দেওয়া হয়নি। এটি আগের মাসের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়। দেশের মুদ্রাবাজারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা ‘মানি মার্কেট ডাইনামিকস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যাংক খাতে কয়েক বছর ধরে তারল্য সংকট চলছে। এই সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিপুল পরিমাণ তারল্য সহায়তা দিচ্ছে। মে মাসে সর্বোচ্চ ধার নেওয়ার কারণ হলো ঈদের আগের মাস ছিল। এ সময় ব্যাংক থেকে মানুষ খরচ করার জন্য প্রচুর টাকা তোলেন। ফলে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে চাহিদা মেটাতে হয়েছে। এ ছাড়া ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত কয়েকটি ব্যাংকও রেপোতে অর্থ ধার নিচ্ছে। অভিযোগ আছে, অপেক্ষাকৃত কম সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার নিয়ে অনেক ব্যাংক সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে বড় অঙ্কের মুনাফা করছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়, যা রেপো হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি রেপো চালু রয়েছে। আর স্পেশাল লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি বলতে জরুরি মুহূর্তে তারল্য সহায়তা প্রদান করা বোঝায়। বিশেষ করে দৈনন্দিন লেনদেন শেষে কোনো ব্যাংক সিআরআর (আমানতের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ) ঘাটতিতে পড়লে স্পেশাল লিকুইডিটি সাপোর্ট নেয়, যার মেয়াদ একদিন। বর্তমানে রেপোর সুদহার ১০ শতাংশ। আর স্পেশাল লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির সুদহার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মে মাসে বিশেষ তারল্য সহায়তার চেয়ে রেপো উপকরণের আওতায় বেশি অর্থ ধার করেছে। গত মাসে এ দুই উপকরণের আওতায় ধারের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রেপোতে ধারের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকা, যা এপ্রিল মাসের তুলনায় ৪১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে মে মাসে বিশেষ তারল্য সহায়তার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, যা এপ্রিল মাসের তুলনায় ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রেপো ও এসএলএফ মিলে ধারের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৬১ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগস্টে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, অক্টোবরে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা, নভেম্বরে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, মার্চে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা ও এপ্রিলে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো অর্থের জোগানের জন্য প্রথমে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি) যায়। সেখানে পর্যাপ্ত অর্থ না মিললে রেপোর মাধ্যমে মুদ্রাবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে ধার দেওয়া ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রাখতে হয়। কলমানি কিংবা রেপোর মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে না পারলে তবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে ধার নেওয়া হয়। দৈনন্দিন লেনদেন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত সিআরআর ঘাটতি দেখা দিলে স্পেশাল লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি হিসেবে ব্যাংকগুলো অর্থ ধার করে। উভয় ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড তথা সিকিউরিটি বন্ধক রাখতে হয়।