সারাদেশে ভাইরাসজনিত রোগ

মুহম্মদ আকবর
২৮ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সারাদেশে ভাইরাসজনিত রোগ


দেশে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগ। কোভিড-১৯ এর সাব ভেরিয়েন্ট, ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ নানা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে তাদের বেশির ভাগই ওষুধ সেবনে সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু কিডনি, লিভার, হাইপ্রেশার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসজনিত জটিল সমস্যা রয়েছে যাদের, তারা ডেঙ্গু, কোভিড, চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপের দিকে যেতে পারে। এ ছাড়া শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- ডেঙ্গু, কোভিড, চিকুনগুনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা যাচ্ছেন যারা, তাদের অধিকাংশই হয় দেরিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন নয়তো আগে থেকেই তারা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এক্ষেত্রে জ¦রে আক্রান্ত হওয়ার পর কিংবা কোনো উপসর্গ দেখামাত্রই চিকিৎসকের

কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ অবস্থায় রোগীরা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাবে। কিন্তু কোনোভাবেই নিজের সিদ্ধান্তে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। যখন চিকিৎসকরা বলবেন, তখনই কেবল এসব ওষুধ সেবন করা যাবে।

সুস্থতার হার বেশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ সহস্রাধিক রোগী, মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০ জন। অন্যদিকে চলতি বছরে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২৮ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। ২৭ জুন ১৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এদিন করোনায় আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়।

এদিকে আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, চলতি জুন মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে রাজধানীতে জ্বর ও উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসা ১৭১ রোগীর মধ্যে ১৪০ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ৮২ শতাংশ। সংস্থাটি একে উচ্চ সংক্রমণের স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে চিহ্নিত করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

মেডিসিন স্পেশালিস্ট ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, এখন সিজন পরিবর্তন হচ্ছে, এই গরম এই বৃষ্টি। আবহাওয়ার তারতম্যের এমন সময়ে জ¦র হচ্ছে। উপরন্তু রয়েছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, করোনাসহ বিভিন্ন ভাইরাস জ¦র। টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীও আমরা পাচ্ছি। কেউ যদি জ¦রে আক্রান্ত হয় এবং শরীরে প্রচ- ব্যথা, গিরায় গিরায় ব্যথা, সর্দি-কাশি থাকে তাহলে ডেঙ্গু টেস্ট করে ফেলতে হবে। কারণ অন্য ভাইরাস এতটা সিরিয়াস হয় না। কিন্তু ডেঙ্গু রোগে অবহেলা করতে নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে কোভিড টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভালো। তিনি বলেন, সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজন অনুভব করামাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আগামী কয়েকটি মাস আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ে। কারণ এডিস মশা পানি জমলেই ডিম পাড়ে। যেহেতু বর্ষার মৌসুম তাই আগামী কয়েক মাস কিন্তু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু, করোনা, ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে জ¦র হচ্ছে। যাদের বয়স বেশি; ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে যাদের; যারা অন্তঃসত্ত্বা- তাদের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। অধিকাংশই রোগীরই লক্ষণ বোঝা যায় না। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।

জানতে চাইলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এনেসথেশিয়া অ্যান্ড আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রেহান উদ্দিন খান আমাদের সময়কে বলেন, আগে যেমন কোভিডের লক্ষণ ছিল, এবার সেটা বোঝা যাচ্ছে না। আগের মতো উপসর্গ নেই। বলা যায়, সাইলেন্ট কিলারের (নীরব ঘাতক) মতো হয়েছে। এটাও সত্য যে, কোভিড ওই হারে এখনো বৃদ্ধি পায়নি। তবে আশপাশের দেশে যেহেতু বেড়েছে সুতরাং আমাদের এখানেও বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী পর্যায় সজাগ রয়েছে।

এসব ভাইরাস রোগীদের অবস্থা জানতে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যাল (বিএমইউ), শহীদ সোহাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বেশকিছু হাসপাতালে চলতি বছরে করোনা রোগীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে প্রতিটি হাসপাতালেই রয়েছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার রোগী। সবচেয়ে বেশি ভিড় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ওয়ার্ডের বাইরেও সিঁড়িতে-মেঝেতে রোগী দেখা গেছে।