কক্সবাজার সৈকতে কৃত্রিম খাল, ভাঙনের আশঙ্কা
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে বাণিজ্যিক দুই প্রতিষ্ঠান মিলে বালিয়াড়ি কেটে একটি কৃত্রিম খাল তৈরি করেছে। প্রাকৃতিকভাবে পানি চলাচলের স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে একটি বাঁধ তৈরির পর খালটি খনন করা হয়। এতে সৈকত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি বালিয়াড়িতে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সৈকতজুড়ে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়ে পর্যটকদের নিরাপদ সমুদ্রস্নানে প্রতিবন্ধকতারও আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া খাল দিয়ে হোটেল-মোটেলের ময়লা পানি সাগরে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে বলে জানান পরিবেশবাদীরা।
কক্সবাজার সমুদসৈকতের কলাতলী পয়েন্ট সংলগ্ন ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশ দিয়েই দেখা মিলেছে কৃত্রিম খালটির। আশপাশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, হোটেল-মোটেল জোনের কিছু অংশের পানি ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পেছনের সীমানার পাশ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ছড়া দিয়ে চলাচল করত। ওই ছড়ার পানি প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের সামনে দিয়ে সাগরে গিয়ে মিশত। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে মালিক পক্ষ ছড়াটি বন্ধ করে বালির বস্তা দিয়ে একটি বাঁধ তৈরি করে। বাঁধের কারণে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের সামনে পানি জমে বড় ও গভীর ডোবার সৃষ্টি হয়। পরে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানার কোণঘেঁষে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করা হয় একটি কৃত্রিম খাল। এতে খালটি দিয়ে জমে থাকা পানির পাশাপাশি ভারী বর্ষণে ঢলের পানি খালটি দিয়ে প্রতিনিয়ত সাগরে মিশে যাচ্ছে। আর জোয়ার-ভাটার সময় পানি যাতায়াতের কারণে খালটির দিন দিন পরিধি বাড়ছে। এতে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে অবিচ্ছিন্ন সৈকত।
প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে ও ডিভাইন ইকো রিসোর্টের নিয়োগ করা শ্রমিকরা এই কৃত্রিম খালটি খনন করেছেন বলে জানিয়েছেন
ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত স্বার্থে এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে অবিচ্ছিন্ন সৈকত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি সাগরের পরিবেশ দূষণ ও সৌন্দর্যহানির কবলে পড়েছে। খালটি দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি প্রবাহিত হওয়ায় সমুদ্রতটে তৈরি হয়েছে স্থায়ী গর্ত ও গুপ্তখাল। যেই খালের কারণে পর্যটকদের নিরাপদ সমুদ্রস্নানের প্রতিবন্ধকতা তৈরি ছাড়াও প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দায়িত্ব পালনকারি সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, সম্প্রতি বর্ষায় সৈকতের বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়েছে। এতে সমুদ্রস্নানে যাওয়া আটজন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট গর্ত ও গুপ্তখাল চিহ্নিত করা খুবই কষ্টের।
সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের মাঝামাঝি কৃত্রিম খালটির কারণে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যাপক হয়ে উঠেছে। খালটির কারণে সৈকতের বালিয়াড়িজুড়ে ভাঙনের মাত্রাও বেড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের জেনারেল ম্যানজার জাবেদ ইকবাল জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে পানি চলাচল করায় তার সামনে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন রোধ ও পর্যটকদের যাতায়তের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক ছড়ায় বাঁধ তৈরি করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে কেন পানি যাবে, তাই বাঁধ দিয়েছি। তবে খালটি কারা খনন করেছেন জানি না।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
ডিভাইন ইকো রিসোর্টের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম জানান, প্রাকৃতিকভাবে যে পথে পানি নেমে যেত, যেখানে একটি বাঁধ তৈরি হয়েছে। এতে তাদের প্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রচীর ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন বিকল্প পথে পানি যাচ্ছে। এটি কৃত্রিমভাবে খনন করা হলেও তারা এটার সঙ্গে জড়িত নন। কারা করেছে, তাও জানেন না।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব মূলত কক্সবাজার পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তারপরও অবৈধ পন্থায় কেউ কিছু করে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম