উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ সহায়তার অর্থছাড়ে ধস

জিয়াদুল ইসলাম
২২ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ সহায়তার অর্থছাড়ে ধস

দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ সহায়তার অর্থছাড়ে ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা থেকে মোট ঋণ সহায়তা এসেছে প্রায় ৫১৩ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থছাড়ের এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ১৮ শতাংশ কম। ঋণসহায়তা বাবদ যে অর্থছাড় হয়েছে, এর উল্লেখযোগ্য অংশ আগের আসল পরিশোধেই চলে গেছে। ফলে আলোচ্য সময়ে নিট ঋণ সহায়তা বাবদ বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ২৯৭ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড়ে ধস নামার পেছনে দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বিদেশি ঋণ সহায়তার বড় অংশই আসে উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে ঋণ ছাড়ের বিষয়টি। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সংশোধিত এডিপি বরাদ্দের ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে সরকার, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন। গত অর্থবছরের একই সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং এর আগের অর্থবছরে ছিল ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মূলত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আগের সরকারের সময়ে নেওয়া অনেক প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। আবার অনেক প্রকল্পে ঠিকাদার চলে যাওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ সহায়তাও কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মোট বৈদেশিক ঋণ সহায়তার অর্থছাড় হয়েছে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। এ সময়ে বিগত সময়ে আসা ঋণ সহায়তার আসল পরিশোধে খরচ হয়েছে প্রায় ২১৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৪৬৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে প্রকল্পে মোট বিদেশি ঋণ সহায়তা এসেছে ৫১২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। আর খাদ্য সহায়তা হিসেবে এসেছে মাত্র ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রকল্পে ঋণ সহায়তা এসেছিল প্রায় ৬৩২ কোটি ২৬ লাখ ডলার। আর খাদ্য সহায়তা বাবদ এসেছিল ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮০ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের নিট ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে গত ডিসেম্বর মাসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে গত মার্চ মাসে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪ কোটি ২২ লাখ ডলার ছাড় হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। আর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এসেছে চতুর্থ সর্বোচ্চ ২ কোটি ৭২ লাখ ডলারের নিট বিদেশি ঋণ সহায়তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় হয়েছিল। ওই অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক হাজার কোটি ডলারেরও বেশি বিদেশি সহায়তা ছাড় করেছিল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলো। এটি এর আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ৪৩ শতাংশ বেশি ছিল। তবে আগের ঋণ পরিশোধের পর ওই অর্থবছরে নিট বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এটি এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট বৈদেশিক ঋণ সহায়তা কমে দাঁড়ায় ৯২৫ কোটি ডলার। আর ওই অর্থবছরে নিট বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নেমে আসে ৭৫০ কোটি ৬০ লাখ ডলারে। আর গত অর্থবছরে মোট বৈদেশিক ঋণ সামান্য বেড়ে হয় ৯৮৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আর নিট ঋণ সহায়তা দাঁড়ায় ৭৮৩ কোটি ৯২ লাখ ডলার।