পরিবেশবান্ধব নির্মাণ খাত গড়ে তুলতে ইউএনইপি-ইউএনওপিএস’র যৌথ কর্মশালা

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
১৯ জুন ২০২৫, ২৩:১৩
শেয়ার :
পরিবেশবান্ধব নির্মাণ খাত গড়ে তুলতে ইউএনইপি-ইউএনওপিএস’র যৌথ কর্মশালা

বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অঙ্গীকার বৃদ্ধির ফলে নির্মাণ খাত একদিকে যেমন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, অন্যদিকে পরিবেশগত প্রভাবের ক্ষেত্রেও একটি বড় অবদানকারী হয়ে উঠেছে। এই খাতের টেকসই ও সম্পদবান্ধব পদ্ধতিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার “বাংলাদেশে নির্মাণ খাতে নিম্ন-কার্বন ভবিষ্যতের জন্য উপাদান দক্ষতা কৌশল” শীর্ষক একটি বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সিক্স সিজনস হোটেলে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এই কর্মশালাটি উদ্যোগের দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে আয়োজন করা হয়। এতে অংশীদারিত্ব করেছে ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস), ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) সহায়তায় এবং বাংলাদেশ সরকারের হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই)।

এই কর্মশালাটি জার্মান ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (বিএমজেড) অর্থায়িত একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশে নির্মাণ খাতকে আরও পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

জাতীয় কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল নির্মাণ খাতে টেকসই ও উপকরণ দক্ষতা নিশ্চিত করতে গবেষণা-ভিত্তিক ও যৌথ উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।’

ইউএনওপিএসের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরলীধরন বলেন, ‘এই উদ্যোগটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে কীভাবে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, কার্যকর নীতি ও শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্মাণ খাতকে কম কার্বন নিঃসরণ ও সম্পদ-দক্ষ একটি টেকসই খাতে রূপান্তর করা সম্ভব।’

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বার্টলেট ফ্যাকাল্টি অফ দ্য বিল্ট এনভায়রনমেন্টের ভাইস-ডিন রিসার্চ ইয়ান হ্যামিল্টন বলেন, ‘বাংলাদেশে ভবন নির্মাণের দ্রুত বৃদ্ধি লক্ষণীয়। এই কর্মশালা দেশের নির্মাণ খাত ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করেছে, যাতে ভবনগুলোকে আরও টেকসই ও ঝুঁকি-প্রতিরোধী করা যায়। পাশাপাশি, বস্তুগত স্থায়িত্বের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর সমাধান তৈরি করতে সাহায্য করবে।’

ইউএনইপি সদর দপ্তরের জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের সাইটস ইউনিট- বিল্ডিংস প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসার সেলিয়া মার্টিনেজ জুয়েজ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আবাসন নির্মাণ সেক্টরে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ও কৌশল বিষয়ক কারিগরি নির্দেশিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার অংশীজনের সমন্বয়ে পরামর্শমূলক আজকের কর্মশালাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে। এই নির্দেশিকাটি ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন রোডম্যাপ ফর বিল্ডিংস’ এর পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এতে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় কমাতে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে সহায়তা করতে এবং একই সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দিতে পারে।’

ইউএনওপিএস বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাঈখ মোহাম্মদ আলাভী বলেন, ‘বাংলাদেশে টেকসই নির্মাণ চর্চা চালু করার পথে এই উদ্যোগটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকার, জাতিসংঘ সংস্থাগুলো ও নির্মাণ শিল্পের অংশীদারদের মধ্যে দৃঢ় সহযোগিতার মাধ্যমেই এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’

কর্মশালার বিশেষ দিকসমূহ-

● ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একটি প্রেজেন্টেশন, যেখানে নির্মাণ খাত নিয়ে গবেষণার ফলাফল ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হবে।

● দুটি ঘরোয়া আলোচনা (রাউন্ডটেবল), যেখানে খাতটির চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা এবং সমাধানের উপায় খোঁজার ওপর গুরুত্ব থাকবে।

● একটি হাইব্রিড প্যানেল সেশন, যেখানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ বক্তারা অংশগ্রহণ করবেন।

● UNEP, UNOPS এবং HBRI-এর প্রতিনিধিদের আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌথ সমাপনী সেশন, যেখানে কর্মশালার মূল আলোচনা ও সুপারিশগুলো তুলে ধরা হবে।

এ বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক অনলাইন কর্মশালার অন্তর্দৃষ্টি ও সুপারিশের ভিত্তিতে পরিকল্পিত। এই কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, নির্মাণ খাতের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, পেশাদার সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীরা একত্রিত হয়ে নির্মাণ খাতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং উপাদান দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন এবং বাস্তবভিত্তিক সমাধান বের করার পথে কাজ করেন। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের নির্মিত পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমানোর একটি বৃহত্তর সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার অংশ। 

এ কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ, বিভিন্ন অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং টেকসই নির্মাণ উৎসাহিত করতে কারিগরি নির্দেশিকা উন্নয়নের মাধ্যমে একটি পরিবেশবান্ধব নির্মাণ খাত গড়ে তোলা। বাস্তবভিত্তিক, অর্থায়নযোগ্য সমাধান তৈরি করা এবং বাস্তবায়নের জন্য সুস্পষ্ট ও ব্যবহারযোগ্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করাই হচ্ছে এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।