ঢাকা-চট্টগ্রাম জ্বালানি তেলের পাইপলাইন জুলাইয়ে চালু
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত জ্বালানি তেল পরিবহনের পাইপলাইন। প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী জুলাই মাসেই এর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান আমাদের সময়কে বলেন, এই প্রকল্প জ্বালানি পরিবহনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। তেল পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের অভিযোগ অনেকটাই কমে যাবে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। পরে দুইবার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা, যা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন করেছে ভারতীয় কোম্পানি এএসওআই, আর ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চীনের লংওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেনসি লিমিটেড।
প্রকল্পের আওতায় ২৫০ দশমিক ৬৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন বসানো হয়েছে। পাইপলাইনের দুটি অংশ। প্রথম অংশ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত। পাইপলাইনের সঙ্গে বুস্টার পাম্প, ৯টি জেনারেটর, এসসিএডিএ, টেলিকমিউনিকেশন, ক্যাথোডিক প্রটেকশন, পিআইডিএস ও নদী-ক্রসিংসহ যাবতীয় নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ৭ মে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষে পুরোদমে তেল সরবরাহ শুরু করার পরিকল্পনা করছে বিপিসি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহনে নদীপথ ও সড়কপথে মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ ব্যবহৃত হয়। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ২৭ লাখ ২০ হাজার টন ডিজেল সরবরাহ করা যাবে, যার ৪০ শতাংশের ব্যবহার হয় শুধু ঢাকা বিভাগে। বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে আয় হবে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা, আর ব্যয় হবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। ফলে প্রকল্পটি থেকে বার্ষিক সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা এবং ১৬ বছরের মধ্যে বিনিয়োগ উঠে আসবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপোগুলোতে সরাসরি ডিজেল সরবরাহের জন্য নির্মিত এই পাইপলাইনের বর্তমান পরিবহন সক্ষমতা ২৭ দশমিক ২ লাখ টন। তবে চাহিদা বাড়লে ভবিষ্যতে আরও চারটি বুস্টার পাম্প ও চারটি মেইনলাইন পাম্প যুক্ত করে বছরে ৫৪ লাখ টন ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থায় গতি আসার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ ও অপচয়ও কমবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প পরিচালক জানান, দেশের বড় নদীগুলোÑ মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, ব্রহ্মপুত্র, ফুলদী ইত্যাদির নিচ দিয়ে এইচডিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইপ বসানো হয়েছে, যা পরিবেশগত ও প্রযুক্তিগতভাবে নিরাপদ ও টেকসই।