যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে পোশাক রপ্তানি
নানা সংকটের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে পোশাক খাতে নতুন সংকট তৈরি করছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে দেশের পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে ২ হাজার ৩০৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। চলতি বছরের একই সময়ে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ওটেক্সার তথ্যমতে, আলোচ্য সময়ে বিশ^ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিও বেড়েছে ১০ শতাংশ।
চলতি বছর প্রথম ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক আমদানি করেছে ২৬ হাজার ২১৮ মিলিয়ন ডলারের, গত বছরের একই সময়ে আমদানি করেছিল ২৩ হাজার ৬৯৪ মিলিয়ন ডলার। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তথ্যমতে, চলতি বছর প্রথম ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
৪ হাজার ৩৫৭ মিলিয়ন ডলারের, গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৪ হাজার ৩২৮ মিলিয়ন ডলার। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৬৬ শতাংশ।
গত বছর প্রথম ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ছিল ৪ হাজার ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার, চলতি বছর প্রথম ৪ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৯ মিলিয় ডলারে, যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
ওটেক্সার তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, ভারতের ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ, মেক্সিকোর দশমিক ৫৬ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে হন্ডুুরাস ও দক্ষিণ কোরিয়ার। দেশটিতে হন্ডুরাসের পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কমেছে দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি কেবল যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে তা নয়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই-মে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ রপ্তানির শীর্ষ ১০ বাজারের সব কটিতেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, ইতালি, কানাডা ও জাপান। প্রতিটি বাজারে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এই ১০ দেশে ২ হাজার ৮১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১০ শতাংশ। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৭ শতাংশ যায় এই শীর্ষ ১০ বাজারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এই ১০ বাজারসহ অন্যান্য বাজার মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা জানান, দেশের অভ্যন্তরে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে শীর্ষ বাজারগুলোতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা সন্তোষজনক। তবে সামনের দিনগুলোতে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা, দেশের ভেতরে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকিং কার্যক্রমে অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বজায় থাকলে তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১৭ শতাংশ বাড়লেও এই বাজার নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক স্থগিতাদেশ জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেষ হবে। তার মধ্যে দেশটির সঙ্গে দর-কষাকষি শেষ করা না গেলে অতিরিক্ত শুল্কের চাপে পড়তে হবে। এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না দেখায় এরই মধ্যে হতাশা প্রকাশ করছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।
এদিকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। তিনি বলেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এ সংঘাতের ফলে বিশ্ববাজারে জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক খাতে।
সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে সংগঠনের নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্র্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, উচ্চ সুদহার, মূল্যস্ফীতি, দুর্বল অবকাঠামো, মজুরি ও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির চাপে আমরা নিষ্পেষিত। এর মধ্যেই ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। যুদ্ধের ফলে তেলের দাম বেড়ে গেলে এর প্রভাব পোশাক খাতেও পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।