এলএনজির নতুন উৎস খোঁজার তাগিদ
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের কারণে বড় ধরনের সংকটে পড়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের জ¦ালানি খাত। বিশেষ করে কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি চ্যালেঞ্জে পড়ার আগেই নতুন সম্ভাব্য উৎস নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা।
সংঘাতের ধারাবাহিকতায় গত রবিবার পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান। এই প্রণালি দিয়ে সারাবিশ্বের মোট ব্যবহৃত জ¦ালানির ২০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করা হয়। ইরান ছাড়াও সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান পারস্য উপসাগরের পাড়ে। হরমুজ প্রণালির কাছে ওমানেরও অবস্থান। আয়তনে সরু এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি পার হয়ে এসব দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বিশেষ করে জ¦ালানি তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল-গ্যাস বিক্রির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুট পারস্য উপসাগর।
বাংলাদেশ ইরান থেকে সরাসরি পণ্য আমদানি করে না। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে ইরানের পণ্য বিশ্বব্যাপী রপ্তানি হয়। সেখান থেকে বিটুমিন, খেজুর, মসলা ও কিছু নিত্যব্যবহার্য পণ্য বাংলাদেশে আসে। কাতার থেকে আনা এলএনজি বাংলাদেশের জ¦ালানি খাতের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও রয়েছে।
ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে হরমুজ প্রণালিই কেবল নয়- লোহিত সাগর দিয়ে পণ্য পারাপারের ক্ষেত্রেও একটি সংকট তৈরি হতে পারে। তখন সুয়েজ খাল
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
ব্যবহার করতে না পারলে পুরো আফ্রিকা পার হয়ে জাহাজগুলোকে ইউরোপ ও আমেরিকার বন্দরে পৌঁছতে অনেক বেশি পরিবহন খরচ পড়ে যাবে। ইরানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে লোহিত সাগরের দেশ ইয়েমেন নিয়মিতই ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পোর্ট অ্যান্ড শিপিং স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক শাহ আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশে এলএনজি আমদানির বড় উৎস হলো কাতার। এ মুহূর্তে সংঘাত ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে তা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না। আগামীতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে হরমুজ প্রণালি দিয়ে এমনিতেই জাহাজ আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। লোহিত সাগরের মুখে ইয়েমেনের অবস্থান হওয়ায় তারাও ইরানের পক্ষে সংঘাতে জড়িয়ে গেছে। এতে লোহিত সাগর দিয়েও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের উচিত হবে জ¦ালানির বিকল্প উৎস নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরকেন্দ্রিক কিছু এলএনজি বাংলাদেশে আসে, যা চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত নয়।
সূত্র জানায়, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) কাতার থেকে বছরে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটি) এলএনজি আমদানি করে, যা ১৫ বছরের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অংশ। এই চুক্তিটি ২০১৮ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে এবং ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চলবে। এ ছাড়া কাতার থেকে বছরে আরও ১ দশমিক ৮ এমএমটি এলএনজি আমদানির জন্য একটি নতুন চুক্তি হয়েছে, যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহ আলম আমাদের সময়কে বলেন, কাতার থেকে এলএনজিবাহী জাহাজগুলো হরমুজ প্রণালি দিয়েই আসে। আমাদের এলএনজিও আসে সেই পথেই। তবে ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের পর নানা শঙ্কার কথা সবাই বলছে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না। আমরা আশা করছি, সংকটের সময় একটি সমাধান নিশ্চয় সারাবিশে^র জন্যই বের হবে। আর জ¦ালানি সরবরাহের অন্যতম প্রধান এই রুট সচল রাখতে নিশ্চয় যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো ভূমিকা নেবে।
হরমুজ প্রণালি একটি সরু জলপথ। এটি ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত। এ পথ দিয়েই প্রতিদিন বিশ্বের ২০ ভাগ তেল পরিবহন করা হয়। এ তেলের পরিমাণ প্রায় ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল। তাই তেল পরিবহনের এ পথ বন্ধ হলে বিশ্ব পড়বে জ¦ালানি সরবরাহের বড় সমস্যায়। এতে জ¦ালানি ছাড়াও বিশ্ব বাজারের অন্যান্য পণ্যের ওপর বড়োসড়ো প্রভাব পড়বে। ইরান এই প্রণালি বন্ধ করলে জ¦ালানি তেলের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। ইতোমধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ¦ালানি তেলের বেড়ে ৭৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে।