আছিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলা দ্রুত তদন্ত ও বিচারের মডেল

অনুসরণে মাঠ পুলিশকে সদর দপ্তরের নির্দেশ

শাহজাহান আকন্দ শুভ
১৫ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আছিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলা দ্রুত তদন্ত ও বিচারের মডেল

মাগুরার চাঞ্চল্যকর ৮ বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে মাত্র ৩৯ দিনের মধ্যে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আর ঘটনার দিন থেকে মাত্র ৭৩ দিন, তথা ২ মাস ১৩ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করায় আলোচিত মামলাটি দেশের বিচারিক কার্যক্রমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদর দপ্তর শিশু আছিয়া ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত কার্যক্রমকে একটি মডেল হিসেবে বিবেচনা করে তা অনুসরণ করতে সব ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল শনিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিন থেকে আদালতে চার্জশিট দাখিল পর্যন্ত তদন্তের একটি দিনপঞ্জি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬ মার্চ ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। দ্বিতীয় দিনে মূল আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয়। তৃতীয় দিনে মামলা রুজু এবং এজহারনামীয় অপর তিন আসামিকে গ্রেপ্তার; চতুর্থ দিনে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত জব্দ এবং তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পঞ্চম দিনে ভিকটিমের ভ্যাজাইনাল সোয়াব সংগ্রহ এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের আদেশপ্রাপ্তি; ষষ্ঠ দিনে আসামিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ; সপ্তম দিনে ভিকটিম মৃত্যুবরণ করায় তার মৃত্যুসনদ সংগ্রহ; অষ্টম দিনে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় মূল আসামির জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। নবম দিনে ভিকটিমের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ এবং পর্যালোচনা; ১৪তম দিনে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী জোহরার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ; ১৬তম দিনে ডিএনএ প্রতিবেদনপ্রাপ্তি ও পর্যালোচনা; ২০তম দিনে ভিকটিমের বড় বোনের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদনপ্রাপ্তি, পর্যালোচনা ও তিন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ; ২১তম দিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে ডিএনএ প্রতিবেদনের ছায়ালিপি পর্যালোচনার জন্য প্রেরণ; ৩৪তম দিনে মামলার তদন্তের সাক্ষ্যের স্মারকলিপি দাখিল এবং ৩৯তম দিনে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়।

গত ১ মার্চ শিশু আছিয়া বেড়াতে যায় তার বোনের শ্বশুরবাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে। ৫ মার্চ রাতে বোনের শ^শুর হিটু শেখ শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টা করে। পরদিন শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ মারা যায় ছোট্ট আছিয়া। ৮ মার্চ শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই নির্মম ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিচারের দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। মামলার তদন্ত শেষে ১৩ এপ্রিল মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন। ১৭ মে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিনি মূল আসামি হিটু শেখকে প্রাণদণ্ড প্রদান করেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, স্বল্প সময়েও যে কোনো মামলার তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা যায় এটার বিরল দৃষ্টান্ত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলা। মাঠ পুলিশকে এটাকে মডেল হিসেবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। আন্তরিকতা থাকলে এবং অহেতুক বিলম্ব না করলে যে কোনো মামলার তদন্ত কার্যক্রম যে দ্রুত শেষ করা যায় তার বড় উদাহরণ হলো মামলাটি। এতে তদন্ত নিয়ে আর বিচারপ্রার্থীদের বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না।