যমুনার দুপারে ৩০ কিমি জটে সীমাহীন দুর্ভোগ
যমুনা সেতুর ওপর পর পর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় ৫টি যানবাহন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে সেতুর দুই পারে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী যাত্রী ও চালকরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে পুলিশ ও যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষের লোকজন যানজট নিরসনে কাজ করছেন। এদিকে উত্তর বঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ সহাসড়কে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই যমুনা সেতুর পশ্চিম পার থেকে কড্ডার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট ও ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী। যমুনা সেতুর ওপর পাঁচটি গাড়ি বিকল হওয়ার কারণে এমন যানজট দেখা দিয়েছে।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ ও যমুনা সেতু পূর্ব থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতে মহাসড়কে সেতুর পূর্ব থানা এলাকা, যমুনা সেতুর ওপর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় ৫টি যানবাহন বিকল হয়ে যায়। এর ফলে এদিন মধ্যরাত থেকে কয়েক দফায় টোল আদায় বন্ধ রাখা হয় এবং দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো সরাতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এতে মহাসড়কের যমুনা সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা থেকে রাবনা বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানযাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত ও বিকল গাড়িগুলো সরানো হলে ভোর থেকে টোল আদায় শুরু হয় ও ধীর গতিতে গাড়ি চলছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত যমুনা সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা, গোল চত্বর, সেতুর পূর্ব ইব্রাহীমাবাদ ও জোকারচর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা। তীব্র গরমে দুর্ভোগে পড়েন তারা। মাঝে মধ্যে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করছে। তবে সকাল ৮টার পর থেকে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের চালক ওমর ফারুক বলেন, যমুনা সেতুর ওপর ট্রাক-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে জোকারচর এলাকায় কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা ধরে যানজটের মধ্যে পড়ে রয়েছি। গাড়ি চলছেই না। এতে বাসে থাকা যাত্রীরা; বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। কখন যে যানজট ছাড়ে কে জানে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একতা পরিবহনের যাত্রী পোশাককর্মী রিনা খাতুন, রুবিয়া বেগমসহ আরও অনেকে জানান, এরকম ভোগান্তিতে বাড়ি ফেরার পথেও পড়েছিলাম, কর্মস্থলে যাওয়ার পথেও একই দশা। কয়েক ঘণ্টা ধরে সেতু এলাকায় যানজটে বসে আছি।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, দুর্ঘটনার কারণে যানবাহনের ব্যাপক চাপ রয়েছে এবং মহাসড়কে গাড়ির দীর্ঘদিন লাইন থাকলেও ধীরগতিতে চলাচল করছে। দ্রুতই যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
যমুনা সেতু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফয়েজ আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে যমুনা সেতুর ওপর পিকআপ-ট্রাকের সংঘর্ষের জন্য যানবাহনের জটলা লাগে। এ জন্য মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার ধীরগতি রয়েছে। পুলিশ কাজ করছে, খুব দ্রুতই যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, যমুনা সেতুর ওপর গত বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনা ও পর পর ৪/৫টি যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। সেগুলো সরাতে কয়েক দফায় সেতুর উভয় অংশে সাময়িক টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে সেগুলো দ্রুত সেতুর ওপর থেকে অপসারণ করা হলে ভোর থেকে টোল আদায় চালু করা হয়। আশা করছি কিছু সময়ের মধ্যে যানজট কমে আসবে এবং স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। আর সে কারণেই মহাসড়কগুলোতে রয়েছে যানবাহনের বাড়তি চাপ। গতকাল শুক্রবারের তুলনায় শনিবার ভোর থেকেই সহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। যমুনা সেতুর পশ্চিম পার থেকে কড্ডার মোড় পর্যন্ত মহাসড়কে উভয় লেনে যানজট লেগেছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা গামী লেনে যানবাহনের চাপ বেশি। ঈদের এই মৌসুমে স্বাভাবিক সময়ে এই সহাসড়কে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদের আগে এবং পরে এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ দুই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পায়। উত্তরবঙ্গের এই মহাসড়ক দিয়ে ঢাকার সঙ্গে ২২ জেলার যানবাহনের যোগাযোগ রয়েছে। এই মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি প্রাইভেট গাড়ি, ট্রাক ও মোটরসাইকেল চলাচল করে।
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যমুনা সেতুতে সকালে তিন থেকে চারটি যানবাহন বিকল হওয়ায় সেতু থেকে কড্ডার মোড় পর্যন্ত যানজট রয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছেÑ কিছু সময়ের মধ্যেই যানজট দূর হবে।