হাটে ক্রেতার চেয়ে গরু বেশি, স্বল্প লাভে ছাড়ছেন ব্যাপারীরা

রেজাউল রেজা
০৫ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
হাটে ক্রেতার চেয়ে গরু বেশি, স্বল্প লাভে ছাড়ছেন ব্যাপারীরা

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দুই দিন। এই সময়ে এসে কোরবানির পশুর হাটে ভিড় বাড়তে শুরু করলেও কাক্সিক্ষত ক্রেতাসমাগম নেই বলে আক্ষেপ পশু বিক্রেতাদের। তাদের ভাষায়- ‘হাটে ক্রেতার চেয়ে গরুই বেশি’। যারা আসছেন তারা খুঁজছেন ছোট কিংবা মাঝারি আকারের গরু। খুব কম মানুষই ভিড়ছেন বড় গরুর দিকে। বড় গরুর মালিকরা এ নিয়ে বেজায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ঝুঁকি এড়াতে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু নিয়ে আসা ব্যাপারীরা স্বল্প লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেকে দাম ছাড়ছেন না শেষ মুহূর্তে ভালো দাম পাওয়ার আশায়।

রাজধানীর দনিয়া এলাকায় রয়েছে কোরবানির পশুর বড় হাট। আশপাশের এলাকার বাসিন্দার পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে ক্রেতারা ছুটে আসেন পছন্দের পশুর খোঁজে। তবে ক্রেতাসমাগম কম দেখে পশু বিক্রেতারা আশঙ্কা করছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার কোরবানি কম হতে পারে। পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

গরু ব্যাপারীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেকটা দেরিতে হাট চালু হয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে হাটে ক্রেতারা এসেছেন দেরিতে। গত মঙ্গলবার থেকে হাটে ক্রেতা বেড়েছে। কিন্তু বিক্রি সেভাবে বাড়েনি। বিশেষ করে বড় ও মাঝারি গরুর বিক্রি কম। ছোট গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে।

কুষ্টিয়া থেকে এই হাটে ৭টি গরু নিয়ে এসেছেন প্রান্তিক খামারি মো. আয়নাল হোসেন। কাক্সিক্ষত দাম না পেয়ে গতকাল বুধবার থেকে দামে ছাড় দিয়ে ২টি গরু বিক্রি করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, চাহিদা বুঝে সবগুলো মাঝারি আকারের গরু এনেছি এবার। একটি ছাড়া বাকি সবগুলোর আকার প্রায় কাছাকাছি। শুরুতে ছোটটার দাম ১ লাখ ১০ হাজার আর বাকি ৬টির দাম ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত চেয়েছিলাম। তিন দিনেও বিক্রি করতে পারিনি। বৃষ্টির কারণে বেশি দিন হাটে গরু নিয়ে থাকা মুশকিল। তাই আজ (বুধবার) কম লাভ রেখে ছোটটা ৯৫ হাজার আর মাঝারি একটা ১ লাখ ২৫ হাজারে ছেড়ে দিয়েছি। এতে খুব একটা লাভ করতে পারিনি।

সিরাজগঞ্জ থেকে ১২টি গরু এনে চার দিনে মাত্র ১টি বিক্রি করতে পেরেছেন বলে আক্ষেপ জানিয়েছেন মো. ফখরুল ভুইঞা। তিনি জানান, এবার ক্রেতা কম। যারা আসছেন তারা দাম শুনে বেশিক্ষণ দরদাম করছেন না। গত রাতে (মঙ্গলবার) দাম কিছুটা ছেড়ে দিয়ে একটা ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি। এটির দাম অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার পেলে কিছুটা লাভ হতো। বাজারের যা পরিস্থিতি, তাতে বাকিগুলোও কম লাভেই ছেড়ে দিতে হবে। এবার বাণিজ্য ভালো হবে না।

এ হাটে ২টি বড় গরু তুলেছেন মো. হাসিবুল্লাহ। একটির দাম হাঁকিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। হাসিবুল্লাহ বলেন, মানুষ এসে দেখে দাম শুনে চলে যাচ্ছে। বিক্রি করতে পারব কিনা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

এদিকে গত কয়েকদিনে রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে পশুর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতা খুবই কম বলে আক্ষেপ করছেন বিক্রেতারা। তাদের আশঙ্কা এবার কোরবানি কম হবে। বলেন, বর্তমানে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। পাশাপাশি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বড় ব্যবসায়ীসহ অন্য ক্রেতারা যারা বড় পশু কেনেন তারাও সেভাবে পশু কিনছেন না। এতে বড় গরুর বিক্রেতাদের মাথায় হাত পড়েছে। অন্যদিকে কম লাভেই গরু ছেড়ে দিতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ মাঝারি আকারের গরুর বিক্রেতাদের। তবে সে তুলনায় ছোট গরুর চাহিদা থাকায় দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা।

চুয়াডাঙ্গার বিক্রেতা মো. লতিফ সরদার বলেন, অন্যান্যবার মাঝারি গরুর চাহিদা থাকে। এবার চার মণ ওজনের গরুর ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দাম বলছে অনেক কম। যে গরুগুলো এনেছেন সেগুলো ১ লাখ ৩০ হাজারের নিচে বিক্রি করলে লোকসান হবে বলে জানান।

এই হাটেরই আরেক ব্যাপারী মো. পাপন মিয়া কুষ্টিয়া থেকে ৯টি গরু এনে ২টি বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে দামে অনেকটা ছাড় দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করব না ভেবেছিলাম। সেখানে একটি ১ লাখ ২৮ হাজার, আরেকটি ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় ছেড়ে দিয়েছি। এবার ভালো ব্যবসা হবে না। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে দেরি করলে নিজেরও কষ্ট, গরুও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই ঝুঁকি নিচ্ছি না।

কমলাপুর স্টেডিয়ামের উল্টোদিকে একটি স্থানে অনেকগুলো ছোট আকারের গরু নিয়ে হাঁকডাক দিচ্ছে ব্যাপারীরা। ক্রেতাদের সাড়াও পাচ্ছেন তারা। এখানকার একজন ক্রেতা সবুজবাগের বাসিন্দা মো. জুরফিকার আলী বলেন, তিন বন্ধু মিলে কোরবানি দেব, কিন্তু বাজেট কম। ৮০ হাজার টাকার মধ্যে গরু খুঁজছি। এখানে অনেকগুলো ছোট গরু আছে। কিন্তু পছন্দের গরু ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ চাইছেÑ দরদাম করছি।

এখান থেকে গরু কিনে ফিরছিলেন খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, হাটের ভেতরে বাজেটের মধ্যে মেলাতে পারছিলাম না। এখানে ছোট গরু দেখে এলাম। প্রথমে ৯৫ হাজার টাকা চেয়েছিল; ৮৫ হাজারে কিনতে পেরেছি।