নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা
অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া নেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলছে অগুনতি মানুষের বাড়ি ফেরা। গতকাল ছিল ঈদপূর্ব শেষ কর্মদিবস। তাই অফিসে হাজিরা দিয়েই অনেকে রওনা হন বাড়ির পথে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে কাঁধে বা পিঠে ব্যাগ আর কোলে শিশু নিয়ে গ্রামমুখো হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল আর বাস টার্মিনালগুলো পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। আজ ৫ জুন থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি ছুটি। এ ছুটি শেষ হবে ১৪ জুন। অর্থাৎ টানা ১০ দিন ছুটি থাকবে। গতকাল সকাল থেকেই বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে।
এবারের ঈদযাত্রায় কোনো পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। ঈদযাত্রীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে গতকাল রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় তিনি আরও বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘœ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, আমরা তা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সেই তুলনায় বাস অপ্রতুল। কিছু দূরপাল্লার বাস নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছাড়লেও পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। কোথাও কোথাও ধীরগতি দেখা গেলেও বড় কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের আগের দুদিন চাপ আরও বাড়বে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু থেকে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা টোল আদায় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ; সেতু পারাপার হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যান।
হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, যাদের অগ্রিম টিকিট কাটা আছে, তারা গাড়িতে উঠে চলে যেতে পারছেন। তবে আজ যাত্রীর অনেক চাপ, সেই সংখ্যক গাড়ি নেই। এ নিয়ে একটা সংকট আছে। তিনি জানান, গাবতলী গরুর হাটের কারণে গাড়ি আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে, ফলে ছাড়তে কিছুটা সময় লাগছে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গতকাল বিকালের পর সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে অসংখ্য মানুষ ছুটছেন বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীর দিকে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় কাজ করছে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ। তবে এবার ঈদুল আজহার সময় ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চযাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে কালবৈশাখী ঝড় অন্যতম কারণ হতে পারে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদুল আজহার মতো উৎসবে লঞ্চযাত্রা করার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস যাচাই করা, অনুমোদিত লঞ্চে ভ্রমণ করা, অতিরিক্ত যাত্রী ধারণ থেকে বিরত থাকা এবং লাইফজ্যাকেটসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নয়তো দুর্ঘটনার শঙ্কা আছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল ট্রেন চলেছে সময়মতোই। স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়েও অনেকে রওনা হয়েছেন। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে বিকালের পর যাত্রীর চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে যেহেতু সরকারি ছুটি শুরু, তাই আজ (গতকাল) বিকালের পর থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে এবং এই চাপ আগামীকাল পর্যন্ত থাকবে। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে সব ট্রেন।
গফরগাঁও যাবেন সাজেদা বেগম। স্টেশনের কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরছেন টিকিটের জন্য। কিন্তু সিটসহ টিকিট তো নেই-ই, দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিটও কাউন্টারে নেই। পরে বাধ্য হয়ে তিনি জরিমানাসহ গফরগাঁওয়ের একটি টিকিট সংগ্রহ করেন।
এদিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের প্রবেশমুখে একাধিক চেকিং ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ের। সেখানে একাধিক টিটিই দায়িত্ব পালন করছেন; রয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। প্রতিটি যাত্রীকে কড়া টিকিট চেকিংয়ের মধ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
ট্রেনের দেওয়ানগঞ্জগামী যাত্রী সাব্বির বলেন, একটি অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন দেওয়াতে আমরা খুবই খুশি। ১০ দিন আগে টিকিট কেটেছিলাম। দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে ১৭৫ টাকা, সুলভ শ্রেণির সিট। জাস্ট হেলান দিয়ে বসে যাওয়া যায়। তবে সিট যাই হোক, নিরাপদে বাড়ি যেতে পারব- এটা ভেবেই ভালো লাগছে।
জানা গেছে, জ্যামে আটকে পড়ার ভয়ে যাত্রীরা আগেভাগে বাসা থেকে রওনা হয়েছেন। কেউ পিলারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছেন, আবার কেউ পাশে বসা ব্যক্তির সঙ্গে খোশগল্প করছেন। সবাই অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য। আর বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধে ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি র?্যাবের সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন