সুব্রত বাইনকে দুই দফায় হত্যার চেষ্টা করে জিসান
অস্ত্র মামলায় আট দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে। পুলিশের পাশাপাশি টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেলের (টিএফআই) সদস্যরা ঢাকার অপরাধ জগতের এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত বাইন জানিয়েছে, গত বছর ৬ আগস্ট গোপন বন্দিশালা (আয়নাঘর) থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে মুক্ত জীবনে ফিরে নতুন করে বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেয়; নিজের পুরনো এলাকার দখল নেওয়া শুরু করে। পালিয়ে দুবাইয়ে চলে যাওয়া পুরস্কার ঘোষিত আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে এ নিয়েই তার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। জিসান দুই দফায় সুব্রতকে হত্যার চেষ্টাও চালায়। এ কারণে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নেয় সুব্রত বাইন। সেখানে বসেই চলে তার অস্ত্রভা-ার সমৃদ্ধ করার চেষ্টা।
জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত বাইন তার কলকাতার জীবন, সেখানে গ্রেপ্তার, নেপালে পালিয়ে যাওয়া, নেপালের কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ করে পালানো এবং বাংলাদেশে আড়াই বছর ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত বন্দিশালায় থাকার নানা তথ্য প্রকাশ করেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তকারীদের সুব্রত বাইন বলেছে, কলকাতায় পলাতক থাকা অবস্থায় জামিনা নামে এক ভারতীয় নারীকে সে বিয়ে করে। সেখানে ২০ বিঘার মতো কৃষি জমির মালিকও হয়। এ ছাড়া কলকাতায় একটি বাড়িও কেনে। কিন্তু আড়াই বছর আগে তাকে পুশব্যাকের মাধ্যমে বাংলাদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পর কলকাতার সব সম্পদ তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। সব সম্পদ দখলে নিয়েছে ভারতের ওই স্ত্রী।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সুব্রত বাইন বলেছে, কলকাতার আলীপুর কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় একদিন তাকে চোখ বেঁধে কারাগার থেকে বের করা হয়। এ সময় তার দুই হাতে ছিল হাতকড়া। কারাফটক থেকে তাকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। তখন সে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে জানতে চায়, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? প্রত্যুত্তরে তারা তাকে চুপ থাকতে বলেন। সুব্রতর ধারণা ছিল, এনকাউন্টার দেওয়ার জন্যই তাকে কারাগার থেকে বের করা হয়েছে। পরে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে তাকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাকে হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশ থেকেও দুজনকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে তুলে দেওয়ার কথোপকথন শুনতে পায় সুব্রত। তবে চোখ বাঁধা থাকায় তাদের দেখতে পায়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত বাইন আরও জানিয়েছে, তাকে ঢাকায় এনে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেখানে থাকা অবস্থায় একদিন বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে দেখতে পায়- কালো পোশাক পরা লোকজন বাইরে হাঁটাহাঁটি করছেন। কয়েক দিন পর তাকে বন্দিশালা থেকে একটি কক্ষে চোখ বাঁধা অবস্থায় হাজির করা হয়। এরপর চোখ খুলে দেখেন সামনে কয়েকজন চেয়ারে বসা। তারা তাকে বলেন, তোকে একটি নাটক করতে হবে। আর তা হলো তুই টেলিফোনে কথা বলছিস আরেকজনের সঙ্গে। টেলিফোনে তুই বলবি তারেক রহমান ও মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগের দুজনকে হত্যার জন্য টাকা দিয়েছেন। কাদের হত্যা করতে হবে, তা পরে জানানো হবে এটাও বলবি। এ নাটকের বিনিময়ে তোকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারেক রহমান ও মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে এ নাটক করতে রাজি না হওয়ায় সুব্রত বাইনকে বেদম মারধর করা হয়। তাকে বন্দিশালায় ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। তাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তদন্তকারীরা সুব্রত বাইনকে কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বলেন, রুমে নেওয়ার পর যখন চোখ খোলা হয়, তখন ছবির কেউ ছিল কি না। তখন সুব্রত বাইন র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা (বর্তমানে কারাবন্দি) জিয়াউল আহসানের ছবি শনাক্ত করে বলে, উনি ছিলেন।
সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে গত মঙ্গলবার ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। অভিযানে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করার কথা জানায় আইএসপিআর। গ্রেপ্তারের পর গত বুধবার তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়। এরপর সুব্রত বাইনকে অস্ত্র আইনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আট দিনের রিমান্ডে নেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তার দখল থেকে জব্দ করা স্যাটেলাইট ফোনটি ফরেনসিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, গত বছরের ৬ আগস্ট ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত বন্দিশালা থেকে ছাড়া পেয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন মগবাজার, রামপুরা, গুলশান, বাড্ডাসহ আশপাশের এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জোর চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে দুবাইয়ে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং তাকে হত্যার ছক কষে। একদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় সুব্রত। এরপর জিসান বাহিনীকে টেক্কা দিতে সুব্রত বাইন একের পর এক অস্ত্র কেনা শুরু করে। এক পর্যায়ে কুষ্টিয়ায় কিছুদিন থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানে থাকা অবস্থায় কম টাকায় ভারতীয় অস্ত্র কেনার উদ্যোগ নেন।