উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়বে না বিদ্যুতের দাম

লুৎফর রহমান কাকন
০৩ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়বে না বিদ্যুতের দাম

বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নীতিগতভাবে বিদ্যুতের মূল্য না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকার। বিদ্যুৎ খাতে ক্রমান্বয়ে ভর্তুকির পরিমাণ হ্রাস করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সার্বিক ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় এমটা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন ‘আমরা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করছি এবং বিদ্যুতের ব্যয় কমাতে এনার্জি অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এই বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ বাতিল করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় ইতিপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ পর্যালোচনার নিমিত্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা, ২০০৮ যুগোপযোগী করে নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, তিনি আরও বলেন, ইন্টিগ্রেটেড পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে এবং এর আওতায় আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নিজস্ব উদ্যোগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ হতে ২০২৭-২৮ পর্যন্ত সময়ে বাপেক্স কর্তৃক প্রয়োজনীয় জরিপকাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মধ্য মেয়াদে বাপেক্সের নিজস্ব রিগ দ্বারা ৬৯টি কূপ খনন এবং ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার সম্পন্নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের কথা উল্লেখ করে বলেন, পরিশোধিত তেলের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন টন অশোধিত তেল শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, ইউনিট-২ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমদানির তুলনায় রপ্তানির অধিক প্রবৃদ্ধি থাকায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষে চলতি হিসাবের ঘাটতি হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি চলমান থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। এর ফলে প্রকল্পগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত বৈদেশিক ঋণের ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। তবে চলতি অর্থবছরের জুন নাগাদ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে আরও প্রায় ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা পাব বলে প্রত্যাশা করছি।’

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।