স্কুল ব্যাংকিংয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে ভাটা
অ্যাকাউন্ট বাড়লেও কমে যাচ্ছে আমানত
স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি বাড়লেও সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-জুন) স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। গত নয় মাসের ব্যবধানে কমেছে ৩৩২ কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় ৬৮ হাজার। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানত কমে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও আস্থার সংকট।
শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর স্কুল ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয়। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য, ছোটবেলা থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় আরও উপযোগী করে তোলা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এতে অভিভাবকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। স্কুলের বেতন ও অন্যান্য ফি বেড়েছে। অন্যদিকে গত সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম হয়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তা সামনে আসায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে সেসব ব্যাংক থেকে আমানত তোলার চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এর প্রভাব স্কুল ব্যাংকিং আমানতেও পড়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের শুরুতে কিংবা শেষদিকে অনেকের টাকা তোলার চাপ থাকে। অনেকে পর্যটনে যান। আবার অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে আমানত ভাঙতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর মার্চ শেষে বিভিন্ন ব্যাংকে স্কুলশিক্ষার্থীদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের স্থিতি ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮২টি। এসব হিসাবে আমানতের স্থিতি ২ হাজার ৭৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তিন মাস আগে স্কুলশিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ ছিল ৪৪ লাখ ২৮ হাজার ৪২৬টি। আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ফলে গত তিন মাসের ব্যবধানে স্কুল ব্যাংকিংয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৫১ হাজার ৩৫৬টি। আর গত নয় মাসের হিসাবে স্কুল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৬৭ হাজার ৮৬৬টি। তবে একই সময়ে আমানত কমেছে ৩৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে শেষ তিন মাসে কমেছে ৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বেশি ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ১১৪টি হিসাব খুলেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এসব হিসাবে জমা হওয়া আমানতের স্থিতি ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর পরই আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো, যারা এখন পর্যন্ত ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৭টি হিসাব খুলেছে। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৪২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো অ্যাকাউন্ট খুলেছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৪০৬টি। এসব হিসাবে আমানত জমা হয়েছে ৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো অ্যাকাউন্ট খুলেছে ২ হাজার ৭১৫টি, এসব হিসাবে জমা হয়েছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, স্কুল ব্যাংকিংয়ে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অ্যাকাউন্ট খোলায় এগিয়ে রয়েছে। মোট অ্যাকাউন্টের ৫১ শতাংশই ছেলেদের। এর পরিমাণ ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৮১টি। আমানতের পরিমাণেও এগিয়ে রয়েছে ছেলেরাই। মোট আমানতের ৪৯ শতাংশই ছেলেদের।
উল্লেখ্য, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এই অ্যাকাউন্টে সব ধরনের ফি ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন