গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে প্রয়োজন শক্তিশালী স্থানীয় সরকার
একটি দেশ ও সমাজে কার্যকর স্থানীয় সরকার তৃণমূল থেকে গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। সাধারণ মানুষ সুশাসনের অংশীদার হয়। উন্নয়ন ও সেবা ব্যয় সাশ্রয়ী এবং গুণ ও মানসম্পন্ন হয়। স্থানীয় সরকার স্থানীয় জনসাধারণের জন্য গণতন্ত্রচর্চার প্রাথমিক ও মধ্যম স্তরের পাঠশালা। এখানে গণতন্ত্রচর্চা জাতীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। সবকিছু মিলিয়ে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য রাষ্ট্র ও সরকারের উপব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় সরকারের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। তাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে পশ্চিমের উদারনৈতিক গণতান্ত্রিকচর্চায় রাজনীতি ও রাষ্ট্রকাঠামোয় একটি বিশিষ্ট স্থানে অধিষ্ঠিত করা হয়। সেখানে বিশ^নন্দিত তাত্ত্বিক ও দার্শনিকরা যেমন জন স্টুয়ার্ট মিল (১৮৫৯), আলেক্সিস ডি টকিয়াভেলি (১৮৩৫), হ্যারল্ড লাস্কি (১৯৩১), সি এইচ উইলসন (১৯৪৮), জেরেমি বেন্থাম প্রমুখ দার্শনিক জাতীয় গণতন্ত্র বিকাশের পূর্বশর্ত হিসেবে স্থানীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও লালনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের ‘রাজনৈতিক শিক্ষা’র গুরুত্ব প্রসঙ্গে টকিয়াভেলি বলেন, ‘town meetings are to liberty what primary schools are to science : that bring it within the people’s reach, the men know how to use and enjoy it..’
বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের পর সাধারণের আশা-আকাক্সক্ষা প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। গণতন্ত্রের প্রবল আকাক্সক্ষার অংশ হিসেবে অন্য সবকিছুর মতো স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় দুর্দান্ত কিছু ইতিবাচক পরিববর্তন সূচিত হয়। তার মধ্যে প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবর্তন সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা পুনর্গঠন। তার পরের ইতিহাসে স্থানীয় সরকার নানা নেতিবাচকতায় এমনভাবে ন্যুব্জ হয়ে পড়ে যে, এটি উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বারবার ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানে স্থানীয় শাসন বিষয়ে অনেক প্রগতিশীল বিধান যুক্ত করা হয় বলে দাবি করা হচ্ছিল। এ নিয়ে সবাই আমরা একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। গণতন্ত্রের নানা বিপর্যয়, শাসনতান্ত্রিক সংকট, হত্যা, সামরিক অভ্যুত্থান, গণ-অভ্যুত্থান, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়া প্রভৃতি বড় বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে জাতি দিশাহারা থাকে।
স্থানীয় সরকার বা স্থানীয় শাসন এসব ডামাডোলের মধ্যে পড়ে রাজনীতিবিদদের সুস্থ স্বাভাবিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নানা সামরিক ও বেসামরিক রেজিম ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ রাজনৈতিক বা দলীয় স্বার্থের ধারক-বাহক হয়ে ওঠায় কোনো শাসক একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক জনপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থানীয় সরকারকে গড়ে তোলার কোনো চিন্তাশীল নীতিকাঠামো দিতে পারেনি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোটযুদ্ধের সম্মুখ সৈনিক, স্থানীয় দলীয় কর্মী সংগ্রহ, তাদের পালন-পোষণের হাতিয়ার এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার এগুলো মুখ্য বিষয় হয়ে দেখা দেয়।
বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপের একটি স্থায়ী বন্দোবস্ত ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে। একদিকে আগ্রাসী রাজনীতি, অপরদিকে প্রশাসন বা আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি শক্ত করা। তার সব উদ্দেশ্য অসৎ না হলেও যদি ভ্রান্তিবশতও করা হয়, তা হচ্ছে স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় শাসনের একটি গাঁটছড়া বেঁধে দেওয়া। দেশের সব প্রশাসনিক এককে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের সমান্তরাল উপস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয়ের অবাধ ক্ষমতা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরগাছা বানিয়ে ফেলে। প্রতিটি প্রশাসনিক এককের বিপরীতে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার করে একই কাজের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্মকর্তা উভয়কে দেওয়া হয়েছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে চারটি বিষয়, যথা- কাজ (Function) কর্মী (functionary), অর্থ-সম্পদ (Fund) এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা (Freedom) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকারের তার কোনোটিই নেই। যেমনথ উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হাতে স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্ম, কর্মী ও অর্থ তিনটিই রয়েছে। তেমনিভাবে শিক্ষা, কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, সমাজসেবা, যুব, মহিলা ও শিশু প্রতি ক্ষেত্রে একই অবস্থা। স্থানীয় সরকারি দপ্তর যা করে, তার সব কাজের দায়িত্ব নানাভাবে স্থানীয় সরকারকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্ম দেওয়া হলেও কর্মী, অর্থ ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। তাই পুরো বিষয়টি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি হয়ে আছে। এটিকে একাডেমিক ভাষায় বলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট কর্ম, দক্ষ কর্মী, কর্ম করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান ছাড়া কাজের যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ, তথা unfunded mandate.
জেলায় জেলা প্রশাসন এবং সব উন্নয়ন ও সেবা প্রদানকারী সরকারি-বেসরকারি দপ্তর-অধিদপ্তর থেকে জেলা পরিষদ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ভোটগ্রহণ পদ্ধতির কারণে জনসাধারণ থেকেও বিচ্ছিন্ন একটি রাজনৈতিক ও দলীয় আখড়া। অপরদিকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকল্প ব্যয় জেলা পরিষদ করতে পারে না।
উপজেলা পরিষদ বিভিন্নমুখী দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। তিনজন জনপ্রতিনিধি নিয়ে উপজেলা পরিষদ- একজন চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান। তিন জনেরই নির্বাচনী এলাকার আয়তন ও জনসংখ্যা একই, কিন্তু ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা যা দেওয়া হয়েছে, তা সবই চেয়ারম্যানের করায়ত্তে। চেয়ারম্যানের হাতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সব প্রশাসনিক নেতৃত্বের চাবিকাঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা ও পৌরসভার মেয়ররা পদাধিকারবলে উপজেলা পরিষদের সদস্য। তারা কেউ উপজেলা পরিষদকে নিজের পরিষদ মনে করে না। তারা অর্থ ভাগাভাগীর অংশীদারমাত্র। সবার ওপরে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্যের অদৃশ্য হাতের প্রবল এক নিয়ন্ত্রণ।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন বা মাঠ প্রশাসনের অনুগ্রহভাজন ও অধস্তন অবস্থানে নিজেদের দেখে আসছে। তাই নেতৃত্বের স্বাধীন সত্তার বিকাশের বদলে একটি অধস্তনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। আবার গত দেড়-দুই দশক ধরে অতি রাজনীতিকরণের কারণে কোনো নিয়মনীতি না মানার একটি নৈরাজ্যকর সংস্কৃতির অঙ্গীভূত হতে থাকে। এ দুই প্রবণতাই সুস্থ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা বিকাশের পথে একটি সাংস্কৃতিক বিপর্যয়।
আমাদের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় একদিকে গ্রামীণ পর্যায়ে একটি ত্রিস্তরীয় কাঠামো (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ)। অন্যদিকে নগরে একটি দ্বিস্তরীয় সংগঠন কাঠামো (পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন) বিদ্যমান। এসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হয়, কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা প্রশ্নবিদ্ধ। আইনত কাজের তালিকা আকর্ষণীয় কিন্তু কাজ করা হয় আইনের বাইরে। আইনে যা যেভাবে করতে বলা আছে, তা সেভাবে হয় না। অন্য অনেক কাজ হয় যা নিয়মনীতিবহির্ভূত। বিরাজিত আইন ও সংগঠন কাঠামো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যার ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও অস্বচ্ছতা বিরাজমান। ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় গণতান্ত্রিক একটি পরিবেশ বজায় রাখা, একক ক্ষমতা চর্চার পথ রুদ্ধ করে পরিষদ ও কাউন্সিলে সবার অংশগ্রহণের প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং নেতা নির্বাচন ও নেতৃত্ব চর্চায় ভারসাম্য আনয়ন একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সংগঠন কাঠামো গণতন্ত্রায়নের পাশাপাশি আর একটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। তা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রাজনৈতিক প্রয়োজনে
বিভিন্ন স্তরে যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সংগঠন কাঠামো সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোর একটি যৌক্তিক অভিন্ন রূপ-কাঠামো তৈরি করা, যাতে আন্তঃপ্রতিষ্ঠান কার্যকর সম্পর্ক সৃষ্টি করা যায়। একটি দিক হচ্ছে, কয়েকটি কমিশন উপর্যুপরি উপস্থাপনের পরও কোনো সমাধান করা হয়নি, তা হচ্ছেÑ স্থানীয় সরকারব্যবস্থার একীভূত, সহজবোধ্য ও ব্যবহারকারীবান্ধব একটি একক আইন প্রণয়ন।
বর্তমানে উপজেলা পরিষদে কোনো ওয়ার্ড নেই। উপজেলায় ওয়ার্ড সৃষ্টি ইউনিয়নের মতো এত জটিল ও কঠিন হবে না। ছোট এবং মাঝারি সব ইউনিয়ন উপজেলা পরিষদের তিনটি ওয়ার্ড বা নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত হবে। ব্যতিক্রমী বড় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে পাঁচটি ওয়ার্ডেও সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। আবার একইভাবে প্রতিটি উপজেলাও জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য তিন থেকে পাঁচটি ওয়ার্ডে বিভক্ত হতে পারে। জেলা ও উপজেলার ওয়ার্ডগুলো শুধু নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত হবে। এ ওয়ার্ডগুলোয় ওয়ার্ড সদস্যদের কোনো নির্বাহী দায়িত্ব থাকবে না। কারণ ওই এলাকাগুলোর সবকিছু ইউনিয়ন পরিষদই দেখাশোনা করবে। এই তিনটি পরিষদের একটি সাধারণ (common) সংগঠন কাঠামো থাকবে। এ সংগঠন কাঠামোর দুটি প্রধান অংশ থাকবে, একটি বিধানিক বা Legislative part অপরটি নির্বাহী অংশ বা Executive part.
গণতান্ত্রিকতার নামে বাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আদলে প্রতিটি স্থানীয় পরিষদে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচন করে সব প্রতিষ্ঠানে একেকজন একনায়ক সৃষ্টি করা হয়েছে। সে একনায়করা নিজেদের পরিষদ বা কাউন্সিলের চেয়ে বড় করে দেখেছেন এবং সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রায়ই পরিষদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা ও বাজেট পদ্ধতি লঙ্ঘন করেছেন। ফলে স্থানীয় সরকারে গণতান্ত্রিকতা সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে একক ব্যক্তি বা পদের বদলে পুরো পরিষদ ও কাউন্সিল ব্যবস্থাকে যৌথভাবে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ করার পদ্ধতি সৃষ্টির চিন্তাভাবনা শুরু করা হয়। ভারত, ব্রিটেনসহ নানা দেশের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণে আমরা বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির স্থলে সংসদীয় পদ্ধতির স্থানীয় সরকার কাঠামো গ্রহণ করলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। নির্বাচন ব্যয় সাশ্রয়ী, সময় সাশ্রয়ী ও অধিকতর অংশগ্রহণমূলক হয়। তা ছাড়া নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারে।
এখনকার প্রচলিত ব্যবস্থায় একজন ভোটার তিনজন প্রার্থীকে ভোট দেন এবং তিনজনের মধ্যে দায়িত্ব বিভক্ত হয়ে পড়ায় সাধারণ ভোটার বিভ্রান্ত হয়। সংসদীয় পদ্ধতিতে স্থানীয় নির্বাচন করা হলে সব ভোটারের একজন নিজস্ব প্রতিনিধি থাকবেন। তিনি সরাসরি তাকে দায়িত্বশীল ভাবতে পারবেন। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় তার সংশ্লিষ্ট সদস্য প্রতিজন ভোটারের কাছে জবাবদিহি করবেন। দেশের কেন্দ্রীয় বা জাতীয় সরকারের অনুরূপ স্থানীয় সরকারগুলো হতে পারে সংসদীয় পদ্ধতির। বলা বাহুল্য, নাগরিক অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এটি নীতিনির্ধারণকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নাগরিক ফোরাম গঠন করে স্থানীয় সিদ্ধান্তে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মাসিক পাবলিক হিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের মতামত নিতে হবে। তরুণদের নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় যুক্ত করতে যুব উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বা স্থানীয় রাষ্ট্রের এ ধারণাটি এখন আদর্শগত ভিন্নতা, সংগঠনের প্রকার ও চরিত্র নির্বিশেষে অর্থাৎ পুঁজিবাদী, সমাজতান্ত্রিক ও মিশ্র অর্থনীতি, আবার অপর প্রান্তে উদার গণতান্ত্রিক, সর্বাত্মকবাদী, একনায়কতান্ত্রিক এমনকি রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও একক একটি মনোলিথিক রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে শাসনকাঠামোর ভৌগোলিক বিভাজ্যতাকে অপরিহার্য জ্ঞান করা হয়। প্রকৃত শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা সুপারিশ এলেও তা কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে, গণতন্ত্রের সুফল পেতে হলে স্থানীয় সরকার কাঠামোয় অবশ্যই যুগোপযোগী সংস্কার আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলোর আলোকে একটি শক্তিশালী, কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক স্থানীয় সরকার গঠনই হোক আমাদের অঙ্গীকার। ¿
আরও পড়ুন:
ভয়ে লিখব নাকি নির্ভয়ে লিখব
লেখক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর; সদস্য, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন