আনচেলত্তি-মদ্রিচ-ভাসকেসদের বিদায় রাঙালেন এমবাপ্পে

স্পোর্টস ডেস্ক
২৫ মে ২০২৫, ০৯:১১
শেয়ার :
আনচেলত্তি-মদ্রিচ-ভাসকেসদের বিদায় রাঙালেন এমবাপ্পে

একই দিনে, একই ম্যাচে, একই মাঠে বিদায় হলো তিন কিংবদন্তি। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে শেষবারের মতো মাঠে নামলেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি, তারকা মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ ও গ্যালাকটিকোদের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী লুকাস ভাসকেস।

লা লিগায় ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে নামে। আর কিংবদন্তিদের বিদায়কে দারুণভাবে রাঙিয়ে দিলেন দলের সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল সোসিয়েদাদকে ২-০ গোলে হারানোর ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের জোড়া গোল করেছেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড।

তবে ম্যাচ শেষের আগে বার্নাব্যুতে যেন সবকিছু একরকম থমকে গেল। দুই দলের কয়েকজন খেলোয়াড় দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন, মাঝ দিয়ে ধীর পায়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন লুকা মদ্রিচ। শেষবারের মতো প্রিয় এই আঙিনা ছেড়ে গেলেন ক্রোয়াট গ্রেট।

রিয়াল সতীর্থদের কয়েকজন তাকে জড়িয়ে ধরলেন, গত বছর বিদায় নেওয়া আরেক গ্রেট টনি ক্রুসও হাসিমুখে এগিয়ে এলেন দীর্ঘদিনের সতীর্থের বিদায়ের সঙ্গী হতে। মদ্রিচকে কয়েকবার দুই চোখ মুছতে দেখা গেল। হয়তো চোখের অশ্রু মোছার চেষ্টাই করছিলেন রেয়াল মাদ্রিদের অনেক সাফল্যের নায়ক।

মদ্রিচের মতো এতদিনের প্রিয় আঙিনাকে বিদায় বললেন লুকাস ভাসকেসও। এছাড়া শেষ হলো দলটিতে কোচ কার্লো আনচেলত্তির দ্বিতীয় অধ্যায়।

লিগের শিরোপা লড়াই আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং সোসিয়েদাদও কোনো দৌড়ে না থাকায়, ম্যাচটি দুই পক্ষের জন্য কেবল ছিল আনুষ্ঠানিকতার। যেখানে ৩৬তম মিনিটে সোসিয়েদাদের বক্সে তাদের মিডফিল্ডার পাবলো মারিনের হাতে বল লাগলে, ভিএআরে মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এমবাপ্পের দুর্বল স্পট কিক অবশ্য রুখে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক, যদিও বল হাতে রাখতে পারেননি তিনি। ফিরতি বল দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় লক্ষ্যে পাঠিয়ে গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে অবস্থান সংহত করেন এমবাপ্পে।

বিরতির পর ৭৭তম মিনিটে লুকাস ভাসকেসকে তুলে গন্সালো গার্সিয়াকে নামান রিয়াল কোচ এবং মুহূর্তটা আবেগময় হয়ে উঠে। মাঠ থেকে ভাসকেস বেরিয়ে যাওয়ার সময় পুরো গ্যালারি দাঁড়িয়ে, করতালিতে তাকে অভিবাদন জানান, তিনিও দুই হাত তুলে যেন বিদায় জানান।

আসলে কোচ কার্লো আনচেলত্তি ও গ্রেট লুকা মদ্রিচের বিদায়ের শোরগোলের মাঝে ভাসকেসের চলে যাওয়ার গুঞ্জন অনেকটা চাপা পড়ে যায়। তার নামের পাশেও সেভাবে কখনও তারকা শব্দটা যোগ হয়নি; কিন্তু দলের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনে খেলতে প্রস্তুত এই স্প্যানিয়ার্ড রিয়াল মাদ্রিদে সবসময় কোচের পরিকল্পনায় ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।

এমবাপ্পে এর ছয় মিনিট পরই দ্বিতীয় গোলটি করেন। ভিনিসিউসের দুর্দান্ত এক থ্রু পাস ছয় গজ বক্সের বাইরে পেয়ে, দুরূহ কোণ থেকে কোনাকুনি শটে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন তিনি। পিএসজি ছেড়ে গত জুলাইয়ে বের্নাবেউয়ে পাড়ি জমানো এমবাপে লা লিগায় অভিষেক মৌসুমেই ৩১টি গোল করলেন। তার চেয়ে ছয়টি কম নিয়ে তালিকায় দুইয়ে আছেন বার্সেলোনার রবের্ট লেভান্ডভস্কি।

৮৭তম মিনিটে মদ্রিচকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কোচ এবং তাকে ঘিরে ক্রমেই পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সতীর্থ ও প্রতিপক্ষের গার্ড অব অনার পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। সাইডলাইনে মদ্রিচের সতীর্থ ও কোচিং স্টাফদের মাঝেই দেখা যায় জার্মান তারকা ক্রুস এবং মদ্রিচের পরিবারকে। কয়েক মিনিট ধরে চলে তার বিদায় পর্ব এবং পুরোটা সময় ধরে শোনা যায় দর্শকদের করতালির শব্দ। টিভি পর্দায় দেখা যায়, এক দর্শকের হাতে ধরা একটি প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা ‘গ্রাসিয়াস মদ্রিচ।’

শেষের বাঁশি বাজতেই বরং আরেক দফা চলে গ্রেটদের বিদায় জানানোর পর্ব। রেয়ালের ডাগআউটে সফল আরেক অধ্যায় শেষ করে আগামী দিন থেকে ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ইতালিয়ান কোচ আনচেলত্তি।

রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে মদ্রিচের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। জুন-জুলাইয়ের ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেই প্রিয় ক্লাবকে বিদায় বলবেন ক্লাবটির হয়ে রেকর্ড ২৮টি ট্রফি জয়ী মদ্রিচ।

৩৮ ম্যাচে ২৬ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে আসর শেষ করল রিয়াল মাদ্রিদ। আগেই শিরোপা নিশ্চিত করা বার্সেলোনার ৩৭ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট।