পশুর হাট নিয়ে আগ্রহ কম

শাহজাহান মোল্লা
২৪ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
পশুর হাট নিয়ে আগ্রহ কম

চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে। সে হিসাবে আগামী ৩ জুন থেকে রাজধানী ঢাকায় অস্থায়ী পশুরহাট বসবে। সিটি করপোরেশনের নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে অস্থায়ী পশুর হাটে কেনাবেচা শুরু করা যাবে। যদিও তার আগে থেকেই হাটগুলোতে পশু উঠতে শুরু করে। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জুনের শুরু থেকেই রাজধানীর হাটগুলোতে কোরবানি পশু আসতে শুরু করবে।

এদিকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পশুহাটগুলোর ইজারা কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। জানা গেছে, নিরাপত্তা সংকটে এবার পশুর হাটের ইজারা নিয়ে আগ্রহ কম। ফলে বারবার টেন্ডার আহ্বান করেও কিছু হাটের জন্য দরদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য চাহিদার চাইতে কম মূল্যে হাটের ইজারা হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন দুই সিটির কর্মকর্তারা।

এবার হাটের আগ্রহ কম হওয়ার কারণ হিসেবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে কাউন্সিলররাই হাট নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের পছন্দের অনুসারীদের দিয়ে হাটের ইজারা নিতেন। কিন্তু এবার কাউন্সিলর নেই। তা ছাড়া হাট ইজারা নিয়ে কাক্সিক্ষত ইজারামূল্য তুলতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে তাদের। বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় কোন এলাকা কারা নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটা বুঝতে না পারায় অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

আবার এর মধ্যে পশুহাটের ইজারা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুদক অনুসন্ধানও করেছে। তাই হাটের ইজারা নিয়ে খোদ ডিএনসিসি প্রশাসকের আগ্রহও কমে গেছে।

ডিএনসিসি প্রশাসক গাবতরী পশুর হাট নিজের পছন্দের লোককে ইজারা দিতে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে ওই হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা না দিয়ে নিজেদের লোক দিয়ে খাস আদায় করছিলেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে সেই খাস আদায়ও বাতিল করা হয়।

দুই সিটির দরপত্র আহ্বান ও মূল্যায়ন পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়, এবার পশুহাট নিয়ে আগ্রহ কম। গত ২৯ এপ্রিল নিজেদের এলাকায় ১০টি স্থানে অস্থায়ী পশুহাট ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডিএনসিসি। প্রথম পর্যায়ে এ দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ১৮ মে। এর পর দরপত্র উন্মোচন হলে দেখা যায়, পাঁচটি হাটে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম মূল্যের দরপত্র জমা পড়ে। এগুলো হলোÑ ভাটারা সুতিভোলার সরকারি মূল্য ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, উত্তরা দিয়াবাড়ীর ৮ কোটি ৯০ লাখ, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আফতাবনগরের ১ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার, মোহাম্মদপুর বছিলার ২ কোটি ২০ লাখ এবং ভাটুলিয়া সাবেক আলীর সরকারি মূল্য ছিল ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে আফতাবনগরে অস্থায়ী পশুর হাট না বসাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় কেউ দরপত্র জমা দেয়নি।

অন্যদিকে চারটি হাটের জন্য সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যের দরপত্র জমা পড়েছে। এগুলো হলোÑ মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৬ টাকা, তেজগাঁওস্থ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন খোলা জায়গার ৬৪ লাখ ২ হাজার ৪০০, খিলক্ষেতের মাস্তুলের ১ কোটি সাড়ে ৭ হাজার এবং একই এলাকার বনরূপা আবাসিক এলাকার হাটের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যের দরপত্র জমা পড়ে।

এবার পশুর হাট নিয়ে ডিএনসিসির প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আমাদের সময়কে বলেন, হাট নিয়ে শোরগোলের কিছু নেই। আমরা এখনও হাটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। কিছু হাটের দরপত্র মূল্য সরকারি মূল্যের চাইতে অনেক কম। এ জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার ঢাকার দুই সিটিতে গতবারের চাইতে চারটি হাট কম বসতে পারে। গতকাল পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯টি হাট বসানো চূড়ান্ত হলেও উত্তর সিটি করপোরেশনে ঠিক কতটি হাট বসবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ডিএনসিসির গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটসহ ১২টি হাট থাকলেও সেখান থেকে দুটি কম হাট বসানোর কথা জানা গেছে। সেক্ষেত্রে দুই সিটিতে মোট ১৯টি হাট বসতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ঈদুল আজহায় দুই সিটিতে মোট ২২টি পশুর হাট বসেছিল। তার মধ্যে ডিএনসিসির গাবতলী স্থায়ী হাট ব্যবহারের পাশাপাশি ৯টি অস্থায়ী হাট বসেছিল। অন্যদিকে ডিএসসিসির সারুলিয়ায় স্থায়ী হাটের পাশাপাশি ১১টি অস্থায়ী হাট বসেছিল।

ডিএনসিসির যেসব জায়গায় পশুর হাট বসেছিল

ডিএনসিসির আওতায় হাটগুলো- ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন খোলা জায়গা, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া ব্যাপারীপাড়া রহমান নগর আবাসিক প্রকল্প এলাকা ও খিলক্ষেতের মাস্তুল চেকপোস্ট, ভাটারার সুতিভোলা খালসংলগ্ন খোলা জায়গা, উত্তরার ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের কাওলা শিয়ালডাঙ্গা, বউবাজার এলাকা এবং এফ.জি.এইচ.এল.এম.এন. মিরপুর সেকশন-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং ওপেন স্পেস) ও মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট রাস্তার পাশের খোলা জায়গা।

ডিএসসিসির পশুর হাট

যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল এবং সেকশন ১ ও ২-এর কাছাকাছি খোলা জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউন, রহমতগঞ্জ ক্লাব, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ড, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার, ইনস্টিটিউট লেদার টেকনোলজি কলেজ, পোস্তগোলা খোলা মাঠ, বিশ্বােড সংলগ্ন লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবের পাশের একটি এলাকা। এবার দক্ষিণ সিটিতে মোট ৯টি জায়গায় অস্থায়ী হাট বসবে। এর মধ্যে ৫টির ইজারা চূড়ান্ত হলেও চারটির ব্যাপারে এখনও কাক্সিক্ষত দর পায়নি ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমরা ৫টি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছি। ২টি প্রক্রিয়াধীন। আর ২টি হাটের জন্য তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও কাক্সিক্ষত দরদাতা পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত সরকারি মূল্যে দিতে হয় কিনা, সেটাই ভাবছি।