সাইবার নিরাপত্তাসহ তিন আইনে ৫৮১৮ মামলা

শাহজাহান আকন্দ শুভ
২৪ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সাইবার নিরাপত্তাসহ তিন আইনে ৫৮১৮ মামলা


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর অধীন গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট ৫ হাজার ৮১৮টি মামলা চলমান ছিল। এর মধ্যে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ অনুযায়ী স্পিস অফেন্স-সংক্রান্ত সব মামলা বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের ১ হাজার ৩৪০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে ৪৬১টি মামলা। এ মামলাগুলো এখন ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে নথিভুক্ত করবে পুলিশ। অন্যদিকে কম্পিউটার হ্যাকিং ও অফেন্স-সংক্রান্ত মামলাগুলো সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে চলমান রাখার কথা বলা হয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন

সরকার দায়িত্বগ্রহণ করে গত বছরের ৮ আগস্ট। সে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ বাতিল বা সংশোধনের বিষয়ে জোরালো দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলাগুলো (মুক্ত মতপ্রকাশের কারণে মামলা) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া এসব মামলায় কেউ গ্রেপ্তার থাকলে তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি পাবেন বলেও জানানো হয়।

আইন মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর অধীনে গত আগস্ট পর্যন্ত দেশের আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট ৫ হাজার ৮১৮ মামলা চলমান। বর্তমানে স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত ১ হাজার ৩৪০টি মামলা চলমান, যার মধ্যে ৪৬১ মামলা তদন্তকারী সংস্থার কাছে তদন্তাধীন। ৮৭৯ মামলা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এসব মামলার মধ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্ত মতপ্রকাশের কারণে দায়ের হওয়া মামলাগুলোকে ‘স্পিচ অফেন্স’ এবং কম্পিউটার হ্যাকিং বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতিকে ‘কম্পিউটার অফেন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলাগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ২৭৯টি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭৮৬টি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে ২৭৫টি মামলা চলমান বলে উল্লেখ করা হয়।

আরও বলা হয়েছিল, বর্তমান সরকার স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১ হাজার ৩৪০টি স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলার মধ্যে বিচারাধীন ৮৭৯ মামলা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। তদন্তাধীন ৪৬১ মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে। এর পরই সরকার বিচারাধীন মামলাগুলো প্রত্যাহারের কার্যক্রম শুরু করে।

গত বুধবার সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর গেজেট প্রকাশ করে। এ অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল করা হয় এবং এসব ধারায় বিচারাধীন ও তদন্তাধীন সব মামলা ও কার্যক্রম বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে এসব ধারায় আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত দ- ও জরিমানাও বাতিল করা হয় ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’-এ।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা হলো ২১, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩৪। বাদ পড়া ওই ৯টি ধারায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দ-; পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ; আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ; অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার ইত্যাদির দ-; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি।

এদিকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩-এর ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২২, ২৩, ৩০, ৩২ ও ৩৫ ধারার অপরাধের অনিষ্পন্ন মামলাসমৃহ ট্রাইব্যুনালে এবং অনুরূপ মামলায় প্রদত্ত আদেশ, রায় বা দ-ের বিরুদ্ধে আপিল চলমান থাকবে। উক্ত ৯টি ধারায় যেসব মামলার রিপোর্ট বা অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা হিসেবে গণ্য করা হয় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে।

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩-এর অধীনে রুজুকৃত যেসব মামলা তদন্তাধীন রয়েছে, সেগুলোও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে বাতিল করা হয়েছে। ফলে এসব মামলার তদন্ত আর চলমান থাকবে না। এসব মামলা এখন ফাইনাল রিপোর্টের মাধ্যমে পুলিশ নথিভুক্ত করবে।

জানতে চাইলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম আশরাফুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩-এ রুজুকৃত স্পিচ অফেন্স-সংক্রান্ত সব মামলা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আমাদের কাছে তদন্তাধীন মামলাগুলো আমরা নথিভুক্ত করব। নথিভুক্তের প্রক্রিয়াটি হলো ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া। তার পরও আমরা এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।