শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে কেন ডাস্টবিন

জবাব নেই চসিকের

হামিদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম
২৩ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে কেন ডাস্টবিন

চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ততম রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও আমতলের বিপরীত পাশে একই সীমানা দেয়ালের ভেতরে অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কৃঞ্চ কুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আছে শাহ আমানত মার্কেট, রাইফেল ক্লাব মার্কেট, ইলেকট্রিক মার্কেট ও রিয়াজ উদ্দিন বাজার। এখানকার প্রায় ১২ হাজার দোকান ও প্রতিষ্ঠানের সব আবর্জনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির মূল ফটকসহ চারপাশে ফেলা হয়। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার।

অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল আমাদের সময়কে বলেন, দেড় বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ডাস্টবিনগুলো সরানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে পাঁচটি চিঠি দিয়েছি। মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

এরই মধ্যে দুবার আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসেছেন, প্রত্যেকবারই বলেছি। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি। তিনি বলেন, আবর্জনা পরিষ্কারের গাড়িগুলো হয় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রবেশের সময় আসে, নয়তো বিদ্যালয় ছুটির সময় আসে। এই কাকতালটা বুঝলাম না। এই সময় পুরো এলাকায় যানজট লাগায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির মুখে পড়ে।

শহরের প্রাচীন স্থাপনার মধ্যে আছে কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ, পাশে কদম মোবারক সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়। নগরীর মোমিন রোডে পাশাপাশি অবস্থিত এই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখ প্রায় সময়ই আবর্জনায় ভরা থাকে। কদম মোবারক মসজিদের আশপাশে রাত কাটানো ভবঘুরেরা সেই আবর্জনার ওপর পায়খানা-প্রস্রাব করে।

নগরীর বৌদ্ধমন্দির সড়কের যেদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বাসভবন, সেই ডিসি হিলের বিপরীত পাশে শিশুদের স্কুল ফুলকি। এখানেও প্রায় ৮০০ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। স্কুলের পূর্ব পাশেই ফুটপাতের ওপর ডাস্টবিন। আগ্রাবাদ টিএন্ডটি স্কুলের পাশে রয়েছে পুরো আবাসিক এলাকার ডাস্টবিনটি। এ নিয়ে খোদ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

নগরীর বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকায় বন্দরনগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তালিমুল উম্মাহ গার্লস মাদ্রাসা ও আইডিয়াল হাসপাতাল। এখানে সড়কের মাঝখানে ফ্লাইওভারের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অতিকায় ডাস্টবিন। আশপাশের অন্তত দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকার আবর্জনা এনে এখানে স্তূপ করা হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় আরেফিন নগর প্রধান আবর্জনার ভাগাড়ে। এভাবে দেখা যায়, নগরজুড়েই স্কুলের পাশেই স্থানীয় আবাসিক এলাকার ডাস্টবিনটি তৈরি করা হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে এভাবে ডাস্টবিন বসানো নিয়ে স্বয়ং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এখানে সবাই চায় নিজের প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরের সামনের জায়গা, নিজেদের সোসাইটি কিংবা অফিসের আশপাশের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক। কেউই নিজেদের ময়লাগুলো রাখার জন্য সাময়িকভাবেও একটি জায়গা দিতে চায় না। তাই দৃষ্টিকটু হলেও অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক ডাস্টবিন স্কুলের আশপাশে হয়ে গেছে। আমরা তো সরাসরি আরেফিন নগর (প্রধান আবর্জনার ভাগাড়) নিয়ে যেতে পারব না। কিন্তু সেই জায়গাটা আমাদের কেউ দিচ্ছে না। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাংক আমাদের ১৬টি বড় বিন বানিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমরা ছয়টা করতে পেরেছি। জায়গা না পেয়ে বাকিগুলো করতে পারিনি।

জানতে তাইলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা বিকল্প জায়গা খুঁজছি। অবশ্যই আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে সব ধরনের ডাস্টবিন অপসারণ করব। আমি বাচ্চাদের সামনে ময়লা দেখাতে চাই না। এতে তাদের মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাবে।

চসিক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর সিংহভাগ ডাস্টবিন তুলে দেন। তিনি ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। এ জন্য লোকবলও নিয়োগ করেন। তিনি দিনের পরিবর্তে রাতে আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়ে নগরবাসীকে আবর্জনামুক্ত এবং দুর্গন্ধমুক্ত সকাল উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আ জ ম নাছির উদ্দীনের ৫ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ৬ মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয় নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। তিনি এসেই এই ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ বন্ধ করে দেন। রাতের পরিবর্তে পুনরায় দিনের বেলা আবর্জনা সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু আ জ ম নাছিরের সময়ে সব ডাস্টবিন উচ্ছেদ করায় এলাকার লোকজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের খালি স্থানে আবর্জনা রাখা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র হলে তিনিও খোরশেদ আলম সুজনের নিয়মই চালু রাখেন। বিএনপির সাবেক নগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র হওয়ার পরও আগের নিয়মই চালু আছে।

এ প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা ২০০ থেকে ২৫০ কেজি আবর্জনা ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকশ কাভার্ড ডাস্টবিন কিনছি। শিগগিরই এসব ডাস্টবিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে রাখা হবে। এখানে আবর্জনা রাখা হলে দুর্গন্ধ ছড়াবে না। ভোগান্তিও কমবে।