মেয়াদ শেষে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ
গ্রামীণ সড়ক ও বাজার এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রকল্পের (উইকেয়ার) মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। অথচ এর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৮ শতাংশ, যা অতি নগণ্য বলে মত দিয়েছে সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প পরিদর্শন করে চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। প্রতিবেদনে প্রকল্পের নানা দুর্বল দিক উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি যথাযথভাবে হয়নি, ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব, অধিকাংশ ক্রয় কার্যক্রম ডিপিপির নির্দেশক তারিখের মধ্যে শুরু করা যায়নি, রাস্তার বাঁক সোজা না করায় নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়েছে, প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে কোনো অগ্রগতি নেই। এ ছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে আইএমইডি। জানা গেছে, প্রকল্পটি যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার ১৮টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পটিকে একটি অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে বিবেচনা করার ফলে অবকাঠামোর আশপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সুবিধার বিষয়ে প্রকল্পটিতে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এবং অন্যান্য বেশ কিছু পরিষেবা দেওয়ার সুবিধাসম্পন্ন গ্রোথ সেন্টার সারাদেশে গড়ে তোলার এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত সড়ক প্রশস্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ৩২টি গ্রামীণ বাজার এবং নির্বাচিত গ্রোথ সেন্টারের আধুনিকায়ন ও ৬১১ কিমি সেকেন্ডারি এবং টারসিয়ারি সড়ক নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি গৃহীত হয়।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য- স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক করিডরে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে লাভবান করতে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করা, বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা ও অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনকে সহজ করার পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়ন ঘটানো।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
জানা গেছে, প্রকল্পের যাবতীয় অর্থের সংস্থান বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ ও সরকারের নিজস্ব খাত থেকে হয়েছে। প্রকল্পটি মোট ২ হাজার ১৮০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে সড়ক ও সড়ক নিরাপত্তা, বাজার অবকাঠামো ও লজিস্টিক, লেবার ইনসেটিভ সিভিল ওয়ার্কের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৃক্ষ, শস্য, উদ্ভিদ সম্পদ উৎপাদকারী পুষ্প বা বৃক্ষ, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির সার্বিক কার্যক্রম মোট ১৬টি ওয়ার্ক প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি প্যাকেজের কাজ চলছে এবং ১টি প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনায় রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ, যা প্রকল্পের অতিবাহিত সময়ের (৯৩ শতাংশ) তুলনায় নগণ্য। শুরু করার প্রকৃত তারিখ থেকে বিলম্বে প্রকল্প অনুমোদন, কোডিড-১৯ এর কারণে বিলম্ব, প্রকল্পের ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগে বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদন প্রাপ্তিতে বিলম্ব ইত্যাদি কারণে অগ্রগতি কম হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ অর্থ ব্যয় না হওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি কিছুটা কমেছে।
নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষায় প্রকল্পের ডিপিপির ক্রয় সংক্রান্ত মোট ১০টি প্যাকেজের প্রক্রিয়াকরণ পর্যালোচনা করা হয়। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের আওতাধীন বিভিন্ন ক্রয় কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন অনুসরণ করা হলেও প্রকল্পের অধিকাংশ ক্রয় কার্যক্রম ডিপিপির নির্দেশক তারিখের কাছাকাছি সময়ে শুরু করা যায়নি এবং চুক্তি অনুযায়ী সব ক্রয় কার্যক্রমই ডিপিপির নির্দেশক তারিখ থেকে যথেষ্ট বিলম্বে শেষ হবে। কোনোভাবেই ভৌত কাজ প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদে শেষ হবে না। তাই শিগগিরই প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামো সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে নির্মাণকাজের গুণগতমান সম্পর্কে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া গেলেও কয়েকটি স্থানে ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে বাঁক সরল করা ও সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম সম্পাদন না করায় নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
প্রকল্পের পিআইসি ও পিএসসির মাত্র ২টি করে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। মুল ডিপিপিতে সংস্থান থাকা সত্ত্বেও প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হ ফলে পর্যাপ্ত জায়গা না নিয়ে বাঁক সরলীকরণ ও সড়ক নিরাপত্তার কাজ করায় নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল