অধ্যাদেশ বাতিলসহ ৩ দাবি রাজস্ব কর্মকর্তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
অধ্যাদেশ বাতিলসহ ৩ দাবি রাজস্ব কর্মকর্তাদের

এনবিআর বিলুপ্ত করে জারি করা রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল ও পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এ ছাড়াও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষে এই তিন দাবি জানানো হয়।

দাবি আদায়ে এনবিআরের কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে এই ঐক্য পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এই সংগঠনের ব্যানারেই দাবি আদায়ে তিন দিনের কলম বিরতি পালন করছেন এনবিআরের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে এনবিআরের কার্যক্রম। বিভিন্ন ভ্যাট ও ট্যাক্স অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

উপ-কর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার সিফাত ই মরিয়ম ও ডেপুটি কমিশনার (কাস্টমস) নিনুপ চাকমা ব্রিফিংয়ে উপস্থিতি ছিলেন। এ সময় তারা বলেন, আমরা এনবিআর সংস্কারের বিপক্ষে না। তবে রাতের আঁধারে পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন

জনসম্মুখে প্রকাশ না করে তা পরিবর্তন করে অধ্যাদেশ করা হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবারও (১৭ মে) কর্মবিরতি পালন করা হবে। এর মধ্যে যদি দাবি আদায় না হয় তবে সেদিন আরও বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তিনটি প্রধান দাবি: সংগঠনটির প্রধান তিনটি দাবি হচ্ছে- প্রণীত রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা। পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিষয়ক শ্বেতপত্র আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থাগুলো, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সব অংশীজনের মতামত নিয়ে সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করা।

৫ জরুরি বিষয়: এ ছাড়া তারা আরও ৫টি বিষয়ে চেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- ১. দুর্নীতিমুক্ত রাজস্ব ব্যবস্থা, ২. হয়রানিমুক্ত, সেবাধর্মী ও জনবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থা, ৩. রাজস্ব প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন, ৪. মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে টেকসই ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং ৫. গবেষণা ও পরিসংখ্যান উইংসহ জাতীয় রাজন্ব বোর্ডের বিশেষায়িত উইংগুলোর কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা জোরদার করা।

কলম বিরতি, কথিত সমন্বয়ক: এদিকে দাবি আদায়ে টানা দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কলম বিরতি কর্মসূচি। সারাদেশে সফলভাবে আন্দোলনের পর পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী বিকাল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনের আগে এনবিআর ভবনে দেখা গেছে সমন্বয়কদের আনাগোনা। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনের আগে কথিত এসব সমন্বয়কদের দিয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করানোর চেষ্টা হয়েছে। এর আগে সাত দিনের মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের গ্রেপ্তার, বিচার ও অপসারণের দাবি তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতা। তবে আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে কথিত এ সমন্বয়কদের ভাড়া করে আনার অভিযোগ করেছে ঐক্য পরিষদ।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে এসব ঘটনা ঘটে। দুপুর আড়াইটার এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানান, ‘এনবিআরের পক্ষ থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা হবে’। কিছুক্ষণ পর জনসংযোগ কর্মকর্তা বার্তা পাঠান, ‘৩টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন এনবিআর চেয়ারম্যান’। উপস্থিত হন অনেক সাংবাদিক। এরপরই কথিত সমন্বয়কদের সঙ্গে নিয়ে লিফট থেকে নেমে আসেন তিনি। এরপর ভবনের বাইরে এসে বহিরাগত সমন্বয়কদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের চেষ্টা চালান।

বহিরাগত ইসমাইল সম্রাট নামের এক যুবক নিজে একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চান। দলের নাম বাংলাদেশ জন অধিকার পার্টি। এনবিআরের বিষয়ে তিনি কেন কথা বলবেন, এমন প্রশ্ন করলে সাংবাদিকদের সঙ্গে শুরু হয় বাগবিত-া। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ এসে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বহিরাগতদের এনবিআরের বাইরে বের করে দেয়।

ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতার বিক্ষোভ: এর আগে সকালে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতা। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চপরিষদের সদস্য সাকিব হোসেন এনবিআর চেয়ারম্যানকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিবাদের দোসর সচিব-আমলাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চাই না। ফ্যাসিবাদী আমলাদের রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে উৎখাত করতে হবে।’

সাত দিনের মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা ছোট পরিসরে এসেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে আবদুর রহমানকে অপসারণ না করলে আমরা বড় পরিসরে আন্দোলন শুরু করব। এনবিআর সংস্কার আওয়ামী লীগের মধ্যরাতের ভোটের মতো হয়েছে। অন্ধকারের ভোটের মতো মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করা হয়েছে। কারও কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এখানে ষড়যন্ত্র আছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব না। আইএমএফ ভারতের নির্দেশনায় চলে।’

অচল সেবা কার্যক্রম: ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের আগে পুরো এনবিআর ভবন ছিল লোকে-লোকারণ্য। প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীতে পূর্ণ ছিল এনবিআর প্রাঙ্গণ। প্রথম দিনের মতোই গতকাল সারাদেশের সব কাস্টমস হাউস, শুল্ক স্টেশন, ভ্যাট কমিশনারেট ও কর অঞ্চলে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে বাজেট শাখা, আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা এবং রপ্তানি কার্যক্রমে ঘোষণা অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে কাজ চালিয়ে গেছেন।

এনবিআর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন না। অনেকে আলোচনা ও গল্প করছিলেন। সেবাগ্রহীতারা তাদের কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এনবিআরের চালচিত্র দেখে অনেকেই আসেননি রাজস্ব ভবনে। চেনা এনবিআর প্রাঙ্গণ অনেকটাই অচেনা রূপ ধারণ করেছে। কর্মব্যস্ততা নেই। নেই ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বছরের শেষ সময়। এ সময় অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। এ সময় সবাই যখন রাজস্ব আদয়ের কাজে ব্যস্ত থাকার কথা, তখন কর্মবিরতির কারণে হচ্ছে না কোনো কাজ।

হতাশ তরুণ মেধাবী কর্মকর্তারা: সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস) ক্যাডারের তরুণ মেধাবী কর্মকর্তারা। কর্মসূচি চলাকালে কয়েকজন তরুণ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, দেশে যখন একটি পদ্ধতিগতভাবে সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর মধ্য দিয়ে পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ রাষ্ট্র একটি ন্যায়ভিত্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাবে মনে হচ্ছে, তখন সরকারের এমন একটি সিদ্ধান্ত তাদের হতাশ করেছে।

বিসিএস ট্যাক্সেশন ও কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনে গণপদত্যাগ: এদিকে দেশ, জনগণ ও সার্ভিসের স্বার্থরক্ষায় নির্লিপ্ততার প্রতিবাদে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি, মহাসচিব, ট্রেজারার, যুগ্ম মহাসচিব, নির্বাহী সদস্যসহ ৩০ জনের বেশি নেতা পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। অ্যাসোসিয়েশনের কিছু ঊর্ধ্বতন নেতার এনবিআর স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিপক্ষে কাজ করার প্রতিবাদে তারা গণহারে এই পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

চলমান সংস্কার কার্যক্রমের বিপরীতে এনবিআর বিলুপ্তি: অন্যদিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, শতবর্ষ প্রাচীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের উদ্দেশ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে অত্যন্ত গোপনে, অতি দ্রুততার সঙ্গে এবং প্রত্যাশিত সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে অজ্ঞাত রেখে। অথচ সরকার সামগ্রিক সংস্কার কার্যক্রম একটি কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়ায় শুরু করেছিল। প্রথমে খাতভিত্তিক কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়; কমিশনসমূহ তাদের প্রতিবেদন প্রদান করে।

পরবর্তী সময়ে এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য একটি ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠিত হয়, যারা রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজস্ব বোর্ড সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার একটি পৃথক পরামর্শক কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি, তাদের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়নি, প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়নি। এরপর হঠাৎ করেই মধ্যরাতে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

এনবিআর দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ৮৬ শতাংশই এনবিআরের মাধ্যমে আহরিত হয়, যা জাতীয় উন্নয়ন ব্যয়ের বড় অংশে সরাসরি অবদান রাখে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৬৬ কোটি টাকা। দীর্ঘ সময়ের ধারাবাহিকতায় এই পরিমাণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকায়। এই দীর্ঘ সময়জুড়ে রাজস্ব আহরণের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা যে কোনো রাজস্ব কর্তৃপক্ষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এই অর্জন প্রমাণ করে যে, সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এনবিআর তার দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকেছে।

বহিরাগত চেয়ারম্যান ও নেতৃত্বের দুর্বলতা: ঐক্য পরিষদ নেতারা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে এ পর্যন্ত ৫৩ বছরে মোট ৩১ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন। আদেশ মোতাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিনিয়র মোস্ট সদস্য চেয়ারম্যান হিসেবে পদায়নের কথা লেখা থাকা সত্ত্বেও বিগত সময়ের প্রায় সব চেয়ারম্যানই এসেছেন কাস্টমস ও কর ক্যাডারের বাইরে থেকে। প্রত্যেক চেয়ারম্যানের গড় মেয়াদ মাত্র ১.৭ বছর। চেয়ারম্যানদের স্বল্প মেয়াদ এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, ভ্যাট আইন ব্যবস্থাপনায় বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব বোর্ডের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে হ্রাস করেছে।

পরিষদ নেতারা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোয় দ্বিস্তর বিশিষ্ট প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যবস্থা বিদ্যমান। বোর্ডের নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামো থেকে অনুমোদনের পর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অনুমোদন গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এই দ্বিস্তর অনুমোদন ব্যবস্থার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মারাত্মক দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়। সুতরাং নেতৃত্বের দুর্বলতা, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক বিচ্যুতি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ঘাটতি, বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোয় জটিলতা, এই সবকটি বিষয়ই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে।

এনবিআরের দুর্নীতি প্রচলিত ধারণার বিপরীত: বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্পর্কে একটি ধারণা হলো, এটি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। বাস্তবতা হলো, দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি বিস্তৃত কাঠামোগত সমস্যা, যা শুধু এনবিআর নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি খাতেই কোনো না কোনোভাবে বিদ্যমান। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের খানা জরিপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালের খাতভিত্তিক দুর্নীতির তালিকায় কর ও কাস্টমসের অবস্থান ছিল ১৪তম, যেখানে ২০২১ সালে এ খাতটি শীর্ষ ১৫-এর বাইরে ছিল এবং ২০১৭ সালে ছিল ১৩তম অবস্থানে। এই চিত্র বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, এনবিআরের দুর্নীতি প্রচলিত ধারণার বিপরীত।