জেলা হাসপাতালগুলোকে কেপিআইভুক্তির দাবি

মুহম্মদ আকবর
১৪ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
জেলা হাসপাতালগুলোকে কেপিআইভুক্তির দাবি

প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী সিভিল সার্জন সম্মেলন। সম্মেলনের শেষ দিনে দেশের সিভিল সার্জনরা হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন। তাদের দাবির মধ্যে ছিলÑ জেলা হাসপাতালগুলোকে কি-পারফরম্যান্স ইনডিকেটর (কেপিআই) তালিকাভুক্ত করা, প্রতিটি সিভিল সার্জনের জন্য গানম্যান নিয়োগ এবং হাসপাতালে নিয়মিত পুলিশি টহল।

নিরাপত্তা ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা সম্ভব নয়- জানিয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ডাক্তারদের নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও সেবা প্রদানকে নির্ভরযোগ্য করতে ‘মেডিক্যাল সার্ভিস ইন্স্যুরেন্স’ চালু করা দরকার, যা ইউরোপ-আমেরিকায় বাধ্যতামূলক। তিনি জানান, চিকিৎসায় ভুল হতেই পারে, তবে ইচ্ছাকৃত নয়। তাই চিকিৎসকের কোনো ভুলের দায়ভার চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্যই ইন্স্যুরেন্স কাভারেজের মাধ্যমে নিরসন করা উচিত। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল এলাকায় স্বাস্থ্য পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবার পরিবেশ নিরাপদ রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতালে হামলা, হুমকি ও ভাঙচুরের ঘটনায় সরকারের নজর রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করতে হবে। সিভিল সার্জনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সমাজের মেধাবী অংশ, আপনাদের সিদ্ধান্ত সরাসরি জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলে। এ সময় সেবাকে আরও

জনমুখী করতে উপদেষ্টা কিছু প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ পোস্টমর্টেম সেবা থানা পর্যায়ে বিস্তৃত করা, নারী চিকিৎসকের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলার পরীক্ষার ব্যবস্থা, মানহীন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ছয় মাস গ্রামে কাজের বাধ্যবাধকতা ও সম্মানী বৃদ্ধি, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করে মেডিক্যাল শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রভৃতি। তিনি বলেন, এসব বাস্তবায়িত হলে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে এবং অযোগ্য চিকিৎসক তৈরির ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

সম্মেলনের একদিন আগে সিভিল সার্জনদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরে ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, হাসপাতালে নিরাপত্তাহীনতায় স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকিতে থাকেন। প্রতিটি হাসপাতালে আনসার বা ‘স্বাস্থ্য পুলিশ’ মোতায়েন করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, অবৈধ ক্লিনিক, ভুয়া চিকিৎসক, দালাল ও ভেজাল ওষুধ রোধে সিভিল সার্জনদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সীমিত ক্ষমতা দেওয়া দরকার। এ ছাড়া পদোন্নতি সহজ করতে প্রশাসনিক চিকিৎসকদের জন্য সুপারনিউমারারি পদ তৈরির প্রস্তাবও দেন তিনি।

সিভিল সার্জন সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রমোশন, পদায়ন, বাজেট এবং ওষুধের অপ্রতুলতা সমস্যা এবং তার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনের জন্য ইউনিক হেলথ কার্ড করার বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী প্রমুখ।