শুকিয়ে গেছে লাউয়াছড়া বনের পাহাড়ি ছড়াগুলো
বিকল্প উৎস দরকার
দেশের অন্যতম রেইনফরেস্ট মৌলভীবাজারের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বনের সব কটি ছড়া শুকিয়ে গেছে। কৃত্রিম জলাধারেও নেই পানি। উদ্যানের প্রাণীদের খাদ্য ও বাসস্থান সংকট সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকট হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণীর প্রজনন। পানি ও খাদ্যের অভাবে লোকালয়ে চলে যাচ্ছে সাপ, পশু-পাখি ও জীবজন্তু। কখনও তারা মানুষের হাতে মারা পড়ছে, আবার কখনও বন বিভাগ ও শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন তাদের উদ্ধার করে আবার বনে অবমুক্ত করছেন। এই বনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় প্রয়োজন পরিকল্পিত জলাধার স্থাপন।
১ হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের এক টুকরো বনে উল্লুকসহ নানা কিছু বিরল প্রাণীর বাসস্থান রয়েছে। এ ছাড়া অজস্র সরিসৃপও রয়েছে। একযুগ পূর্বে লাউয়াছড়ায় ঘন বনজঙ্গল থাকলেও বর্তমানে নানা কারণে বন ফাঁকা হয়ে গেছে। বনের ভেতর দিয়ে রেলপথ, সড়কপথ ও বৈদ্যুতিক লাইনে পিষ্ট হয়ে নানা সময়ে বিরল প্রাণীও মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া বনটিকে কেন্দ্র করে অপরিকল্পিত স্থাপনাও গড়ে উঠছে। এ ছাড়া প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলেই লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত লাউয়ছড়া, জানকীছড়া, ডুলুছড়া ও মাগুরছড়াসহ প্রত্যেকটি বনের ছড়া শুকিয়ে যায়। এতে পুরো বনজুড়ে পানির জন্য বন্যপ্রাণী চারদিকে ছোটাছুটি করে। তৃষ্ণা মিটাতে তারা চলে যায় লোকালয়ে। ফলে চরম পানি সংকটে পড়েছে বনটির প্রাণী ও কীটপতঙ্গ।
একাধিক পর্যটক জানান, এখন তো শুষ্ক মৌসুম। তাই বন্যপ্রাণীরা সমস্যায় আছে। এখানকার পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বনকর্মী জানান, বনবিভাগ থেকে যেসব জলাধার তৈরি করা হয়েছে, এগুলোতে পানি বহন করে নিয়ে দিতে হয়। কোনো কোনো জায়গা আছে, যেখানে পানি বহন করে নেওয়াও সম্ভব হয় না। এই পানি ও পাশের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় প্রজনন ঘটায় বেশ কিছু প্রাণী ও পোকা। বাধাগ্রস্ত এটিও।
সিংক স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার ওয়াইল্ড লাইফের সদস্য খোকন সিংহ বলেন, বনটির ভেতরে প্রবাহিত অসংখ্য পাহাড়ি ছড়ার পানি পানে বেঁচে থাকে বন্যপ্রাণীগুলো। গরমে শুকিয়ে গেছে ছড়াগুলোর ৯০ শতাংশ পানিই। শুষ্ক মৌসুমে তৃষ্ণা মিটাতে বনবিভাগের তৈরি চৌবাচ্চাগুলোতেও পানি না পেয়ে দিশাহারা প্রাণীরা।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার ওয়াইল্ড লাইফের সদস্য সুহেল শ্যাম বলেন, জুন-জুলাই বন্যপ্রাণীর বংশ বিস্তারের উপযুক্ত সময়। ওই সময় লাউয়াছড়া বনে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখার। আর পরিকল্পিত জলাধার স্থাপন, ছড়া খনন ও পশু খাদ্যের গাছ রোপণ করা জরুরি। শতবর্ষী ফলের অনেক গাছগাছালিও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে উল্লুক, চশমাপরা হনুমানসহ বিরল প্রজাতির প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থান আরও হুমকিতে পড়ছে। উদ্যানের ভেতরে বহেরা, ডুমুর, হরীতকী, আমলকি, জারুল, রিঠা, ডেউয়া, লটকন, কাঠবাদাম, লুকলুকি, বনউরি, কাউফল, কাটা জামগাছের উপস্থিতি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে বলে জানান বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব। তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে এখানে বসবাসকারী প্রাণীদের ওপর প্রভাব পড়েছে। তাদের প্রজননও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
লাউয়াছড়া বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, অনেক দিন যাতে এই পানিগুলো স্থায়ী হয়, এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা আমাদের আছে। তবে এই দাবদাহের কারণে বর্তমানে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের জন্য বনে জলাধার প্রতিষ্ঠার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যপ্রাণীর বিচরণের সমৃদ্ধ এই বনের বন্যপ্রাণীর আবাসনযোগ্য রাখতে বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেÑ এমনটাই চাওয়া প্রকৃতিপ্রেমীদের।