দুই দশকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
দুই দশকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

গৌরবময় পথ পেরিয়ে ২০তম বর্ষে পা রেখেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালের ৯ মে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই এখন এখানেই শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছেন। নজরুল ও তার চেতনাকে ধারণ করে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, গবেষণা ও উন্নয়নের এই আলোকিত যাত্রায় এমন শিক্ষকদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ

আমার প্রত্যাশা, আমার স্বপ্ন

মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জনি

সাবেক শিক্ষার্থী, বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়Ñ এই নামটি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং আমার শেকড়, আমার আত্মপরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। একসময় এখানে শিক্ষার্থী হিসেবে স্বপ্ন বুনেছিলাম, আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এই যাত্রা আমাকে দিয়েছে অসীম গর্ব, অগণিত স্মৃতি এবং দায়িত্বের ভার। এটি আমাকে শুধু শিক্ষা নয়, স্বপ্ন দেখার সাহসও দিয়েছে। মনে পড়ে সেই শুরুর দিনগুলো। তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টাকে সত্যি বলতে ছোট্ট একটি কাঠামোর মতোই মনে হতো। সেই সীমাবদ্ধতার ভেতরও আমাদের স্বপ্ন ছিল বিশাল, আমাদের আশা ছিল আকাশচুম্বী। আজ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা দেখি, এক অনির্বচনীয় গর্ব অনুভব করি।

আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে হয়ে উঠবে সৃষ্টিশীলতার এক প্রাণকেন্দ্র, যেখানে একে একে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। নতুন নতুন গবেষণাগার, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি এবং বিশ্বমানের শিক্ষকÑ এসবের সমন্বয়ে এক উদ্ভাসিত জ্ঞাননগরী হয়ে উঠুক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আমি চাই, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যেন একটি নিরাপদ, সুন্দর এবং মানবিক পরিবেশে পরিণত হয়, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউ কোনো ধরনের অন্যায়ের শিকার হবে না। কোনও ভয় কিংবা ভীতি যেন তাদের প্রগতির পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাপ্তির ঠিকানা, প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়

আফরোজা ইসলাম লিপি

সাবেক শিক্ষার্থী ও সহকারী অধ্যাপক, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার জীবনের অনেক স্মৃতিময় মুহূর্ত। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন থাকে হাজারো শিক্ষার্থীর। আমিও আমার স্কুল, কলেজ শেষ করে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। অনেক উচ্ছ্বাস আর কৌতূহল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাস করেছিলাম। সহপাঠীদের অপরিচিত মুখগুলো অতি অল্প সময়েই পরিচিত হয়ে উঠল। স্কুল-কলেজে বরাবরই সেরা ছাত্রী ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়েও এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম। শিক্ষক বাবার আদর্শ ও গুণাবলি দেখে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম শিক্ষক হওয়ার। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ থেকে অত্যন্ত সফলভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হওয়ার লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখানেই শিক্ষকতায় যোগদান করেছি স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগে। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে যেভাবে জ্ঞান আহরণ করেছি, সেভাবে নিজের অর্জিত জ্ঞান বিতরণ করার সুযোগও পেয়েছি। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়েই শিক্ষকতায় এসেছি। নিজের কর্মে সফল হয়ে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মানিত করতে চাই। শিক্ষা ও গবেষণায় প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করবে সর্বদাÑ এই প্রত্যাশা করি।

অল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে

তানজিল আহমেদ

সাবেক শিক্ষার্থী ও সহকারী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ

দেখতে দেখতে আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ বছরে পা রেখেছে। একজন সাবেক নজরুলিয়ান হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আত্মিক। অল্প সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের নানা প্রান্তে নজরুলিয়ানদের জয়জয়কার একটা কথাই মনে করিয়ে দেয়Ñ ‘ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন আরশ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!’ এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার প্রত্যাশা অসীম। স্বপ্ন দেখি আমাদের এই প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিক্ষা- গবেষণায়’ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেবে। শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ উন্নত আবাসনব্যবস্থা হবে, মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা থাকবে, হলগুলো পড়াশোনামুখী হবে। ‘ইনোভেটিভ এবং গবেষণালব্ধ’ আলোচনায় ক্লাসরুমগুলো মুখরিত হবে। শিক্ষার্থীরা বাস্তবধর্মী জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পর্শে বেড়ে ওঠা হাজারো তরুণ-তরুণী নিজের লালিত স্বপ্নকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় হয়তো একদিন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।