আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে এনসিপি
যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে
আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তার সঙ্গে সেখানে দলটির আরও নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। এই কর্মসূচির কারণে যমুনার সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে এক ফেসবুক পোস্টে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থানের ডাক দেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় এ কর্মসূচির ডাক দিয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। হাসনাতের ঘোষণার পর রাত ১০টা থেকে সেখানে জড়ো হতে থাকেন জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাসহ এনসিপি নেতাকর্মীরা।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে লেখেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সঙ্গে আমরা নাই।
রাত ১০টার পর হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। সেখানে তার সঙ্গে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নাহিদ ইসলাম ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লেখেন, ‘জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনিদের বিচার এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে। আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠব না।’
জুলাইয়ের সব শক্তি, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ও আহতদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি লিখেছেন, ‘বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। কর্মসূচিতে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ছাড়াও, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মনিরা শারমীন, সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, জুলাই ঐক্যের এবি জুবায়ের, মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন।
সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক পাহারায় দেখা গেছে। যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি কেন্দ্র করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। সেখান দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কাকরাইল মসজিদের সামনে হেয়ার রোড বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে সেনাবাহিনী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এছাড়া এই অবস্থান কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কোনো নেতাকে অংশ নিতে দেখা গেছে।
নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ : আসিফ মাহমুদ
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।
পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন