পাকিস্তানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অকার্যকরের দাবি ভারতের
আমাদের সময় ডেস্ক ষ
ভারতের ১৫টি শহরে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জম্মু ও কাশ্মীরের সামরিক স্থাপনায় পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে দিল্লি। দুই দেশের নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশাপাশি পুরা, আরনিয়া, সাম্বা, হিরানগরে জোরালো হামলা হয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, এসব এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দের পাশাপাশি রাতের আকাশে আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভারতের সিঁদুর অভিযানের পর পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের দাবি, ১৫টি শহর লক্ষ্য করে চালানো এসব হামলার প্রায় সবকটি আকাশেই রুখে দেওয়া হয়েছে। শুধু অমৃতসারে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি, পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি। পাল্টা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও ইসলামাবাদ দাবি করেছে, সামরিক স্থাপনাগুলোয় হামলা চালিয়ে ভারতের প্রায় ৫০ সেনাকে তারা হত্যা করেছে। কিন্তু নয়াদিল্লি জানিয়েছে, পাকিস্তানের হামলায় নারী ও শিশুসহ ১৬ জন নিহত হয়েছে। আবার পাকিস্তানের লাহোরে ড্রোন হামলা হয়েছে গতকালই। এ কারণে নিজেদের কনস্যুলেট কর্মীদের সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর এনডিটিভি, ডন, বিবিসি ও রয়টার্সের।
এনডিটিভি জানিয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় রাত নয়টার কিছু আগে জম্মুতে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর কাশ্মীরের বেশির ভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত এখনও বড় আকার ধারণ করেনি। তবে, দোষারোপের লড়াই ও তথ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ফলে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারছে না। সর্বাত্মক যুদ্ধের এই অবস্থা থেকে দুই পক্ষকেই সরে আসার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, এই সংঘাতের ভার বইতে পারবে না বিশ^।
২২ এপ্রিল ভারতশাসিত পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় এক নেপালিসহ ২৬ জন নিহত হন। সেদিন বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যায় পাকিস্তানের মদদ আছেÑ এই অভিযোগ তোলে ভারত। ৭ মে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ভারত। সিঁদুর নামের এই অভিযানে শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে দাবি করে গতকাল সর্বদলীয় বৈঠক শেষে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেনÑ পাকিস্তান সংযত না হয়ে আবারও সেনাদের ওপর হামলা চালালে আরও কঠোর প্রত্যাঘাত করা হবে। রাজনাথ সিং বলেন, ‘সিঁদুর অভিযান এখনও শেষ হয়নি।’
গত মঙ্গলবার রাতের অভিযানে পাকিস্তানের কোনো জঙ্গি নিহত হয়নি, বরং শিশুসহ ৩১ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি ইসলামাবাদের। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকার এক অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি পাকিস্তানের পতাকা জড়ানো জঙ্গিদের কফিনের ছবি দেখিয়ে দেশটির জঙ্গি-যোগ সম্পর্কে বিশ^কে সচেতন করেছে। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে পেহেলগামের হামলাকে বিশেষ ফায়দা অর্জনের লোভে ভারতের সাজানো নাটক বলে দাবি করে আসছে পাকিস্তান। এমনকি গতকাল অমৃতসারে যে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, তা-ও ভারতেরই ছোড়া বলে দাবি ইসলামাবাদের।
এদিকে ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পাঠানো ইসরায়েলের তৈরি ২৫টি হ্যারোপ ড্রোন ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এর আগে, ভারতের ওড়ানো ফ্রান্সের তৈরি যুদ্ধবিমান রাফালে ভূপাতিত করার দাবি করেছিল পাকিস্তান। প্যারিস স্বীকার করে নিয়েছে যে, ভূপাতিত একটি যুদ্ধবিমান তাদেরই রাফালে। আবার, হামলায় চীনের তৈরি ড্রোন পাকিস্তান ব্যবহার করছে বলে খবর হয়েছে। বেইজিং বলেছে, এ রকম ক্ষেত্রে তাদের তৈরি ড্রোন ব্যবহৃত হবে, এটা নিয়ে তারা আগে ভাবেনি।
দুই পক্ষই গণমাধ্যমে ও বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘যথেষ্ট সংযম প্রদর্শন করছি’ বলে দাবি করছে। নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে প্রায়ই একই হুঙ্কার, ‘ধৈর্যের একটা সীমা আছে। বেশি বাড়লে প্রত্যাঘাত অনিবার্য।’
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ পাকিস্তান আরও হামলা চালাতে পারে, এই আতঙ্কে কাশ্মীরের বিতর্কিত নিয়ন্ত্রণরেখায় চরম উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের উরি অঞ্চলের বাসিন্দাদের গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী রাজ্য রাজস্থান ও পাঞ্জাবে পূর্ণ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাল্টা হামলার জন্য ক্ষেপণাস্ত্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তবে, বিক্রম মিসরি বলেছেন, পাকিস্তান যদি আর হামলা না চালায়, তাহলে ভারতও আর বাড়বে না। সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসতে দেখা গেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে শান্তির জন্য মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রই নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন