হদিস মিলছে না গ্রাহকের পাওনা ১২১ কোটি টাকার

খন্দকার রাকিবুল ইসলাম, রংপুর
০৮ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
হদিস মিলছে না গ্রাহকের পাওনা ১২১ কোটি টাকার

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির রংপুর বিভাগের অপরিশোধিত বীমা দাবির প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের ১২১ কোটি টাকার হদিস মিলছে না। বছরের পর বছর ঘুরেও কষ্টার্জিত জমা করা অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা। এখন এই টাকা ফেরত দিতে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের রংপুর জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপরিশোধিত বীমা দাবির রংপুর বিভাগে ২৯ হাজার ৫৯৬ জন গ্রাহকের প্রায় ১২১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সরকারি আইন অনুযায়ী, বীমার মেয়াদ পূর্তির ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ পূর্তির চার বছরেও মুনাফাসহ মূলধন ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

সরেজমিনে গত সোমবার দুপুরে রংপুর জোনাল অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বীমার মেয়াদ পূর্তির টাকা তুলতে গঙ্গাচড়ার কোলকান্দ ইউনিয়নের গোডাউনের হাট এলাকার সুলতানুর রহমান (৬০) এসেছেন তার স্ত্রী রাশেদা বেগমের বীমার মেয়াদ পূর্তির জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, তিন বছর থেকে ঘুরতেছি টাকার জন্য। টাকা জমা দেওয়ার সময় বলেছিল, হালাল ব্যবসা করি। লাভসহ দেবে। এখন আসল-লাভ কোনোটাই নেই।

রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ রঘুবাজার এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী মোরশেদ আলম জানান, আমার একটা হাত নেই। ১০ বছর ধরে প্রতিমাসে টাকা জমিয়েছিলাম। দুই বছর থেকে ঘুরতেছি। ভাবছিলাম আমি প্রতিবন্ধী, অন্তত আমার টাকাটা তাড়াতাড়ি দেবে; কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, কাগজ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা আসবে। মোরশেদ আরও বলেন, যে লোক বীমা করিয়েছেন তিনি আর ফোন রিসিভ করছেন না।

জানা যায়, বর্তমানে সারাদেশের ২ লাক্ষ ৪৩ হাজার গ্রাহকের বীমার মেয়াদপূর্তির ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ২০০০ সালে ইসলামি মনোভাবাপন্ন লোকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। অভিযোগ রয়েছেÑ ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর জামায়াতপন্থি ও বিএনপিপন্থি পরিচালনা পর্ষদকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির দখল নেয় আওয়ামী লীগ পন্থিরা। ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এসআলম গ্রুপের অধীনে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে লুটপাট চালানো হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তারা। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান প্রতিষ্ঠানটির পুরো দখল নেয়।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি রংপুর জোনাল অফিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাদের বীর বলেন, আমাদের কাছেতো গ্রাহকের টাকা জমা থাকে না। আমরা নিয়ম অনুযায়ী ঢাকায় আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। ঢাকায় সর্বশেষ মিটিংয়ে গ্রাহকের পাওনা টাকা নিয়ে আমরা কথা বলেছি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। চেয়ারম্যান নতুন এসেছেন; তারা বলেছেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ বিক্রি করে ও মাঠ পর্যায়ে টাকা কালেকশন করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।