ধসে পড়েছে শেয়ারবাজার
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জের
দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৯৭ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩ শতাংশের বেশি। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধজনিত ভীতির কারণে এমনটি ঘটেছে। যদিও তারা মনে করেন, এ আতঙ্ক একেবারেই অর্থহীন। প্রথমত, পাকিস্তান-ভারতের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে গড়াবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এ সংঘাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। অকারণ আতঙ্কে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে শেয়ার বিক্রি করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, সুযোগ নেবে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এদিকে ওই হামলার জবাবে পাকিস্তান ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে। এ সংঘাতের ঘটনা টানা মন্দাবস্থার ভেতর দিয়ে যাওয়া পুঁজিবাজারে বড় আঘাত হিসেবে নেমে আসে। আস্থার সংকটে ভুগতে থাকা বিনিয়োগকারীদের একাংশের নার্ভাস ব্রেকডাউন ঘটে। অকারণ আতঙ্কে তারা শেয়ার বিক্রির জন্য মরিয়া হয়ে উঠায় বাজার টালমাটাল হয়ে ওঠে।
গতকাল বুধবার মূল্যসূচকের নিম্নমুখী ধারাকে সঙ্গী করেই লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। বেলা যত বাড়তে থাকে সূচক ততই কমতে থাকে। সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গতকালের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ৯৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৫৭ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে নেমে আসে। তবে প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর বাজারে কিছুটা পুনরুদ্ধারের আভাস দেখা যায়। পরবর্তী ২০ মিনিটে সূচকের কিছুটা পুনরুদ্ধারও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ ধারা বজায় থাকেনি। বাজার আবার উল্টোদিকে মোড় নেয়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত পতন চলতেই থাকে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ১৪৯ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা ৩.০১ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৮০২ দশমিক ৪১ পয়েন্টে নেমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় দরপতন হয়নি এই বাজারে। এদিন নির্বাচিত ৩০ কোম্পানির সূচক ডিএস৩০ ২ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং শরিয়াহ সূচক ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমেছে।
গতকাল ডিএসইতে ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৫টি দর হারিয়েছে, যা লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ সময়ে দর বেড়েছে মাত্র ৯টির। আর দর অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের। ডিএসইতে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। এ বাজারে লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৩ টাকাটি ২৮ টাকা কম।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে হতাশা কাজ করছে। এ ছাড়া বাজারে উচ্চ সুদের হার রয়েছে। এখন অনেক শেয়ারের দাম আকর্ষণীয় অবস্থায় থাকলেও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহী করতে পারছে না। পাশাপাশি রাজনৈতিক সরকারের জন্যও অনেক বিনিয়োগকারী অপেক্ষা করছেন। ৫ আগস্টের পর দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যে ধরনের সংস্কার প্রত্যাশা ছিল, তার প্রতিফলন নেই। এ ছাড়া বিনিয়োগ নিরাপত্তার অভাবেই বাজারে পতন হচ্ছে।
বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা : এদিকে পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী রবিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ‘পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ’ বিষয়ক একটি সভা হবে। সভায় অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বিএসইসির চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম