সিপিজিসিবিএলের সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে কয়লাসহ জাহাজ
কোটি কোটি টাকা জরিমানার শঙ্কা
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লার সঙ্গে কিছু মাটি চলে আসার অভিযোগে প্রায় দেড় মাস ধরে বহির্নোঙরে আটকে আছে একটি বিদেশি জাহাজ। বিষয়টি সমাধানে দ্রুত ও বিশ^াসযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করায় মারাত্মক সংকটে পড়েছে কয়লা সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি জাহাজ মালিক। প্রতিদিনই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। একই সঙ্গে বিদেশি জাহাজ মালিকদেরও আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে দেশের প্রতি।
জ¦ালানি বিভাগের সূত্র জানায়, মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিনিয়ত বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হয়। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কয়লও নিয়মিত সরবরাহ করে আসছিল। হঠাৎ করে
বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লার গুণগতমান নিয়ে অভিযোগ তোলে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। যার ফলে প্রায় দেড় মাস ধরে বহির্নোঙরে আটকা রয়েছে কয়লাবোঝাই জাহাজটি। আটকে থাকার পর থেকে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের গ্রুপের মাধ্যমে পরীক্ষাপূর্বক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
সূত্রে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজটি বহির্নোঙরে বসে থাকায় একদিকে আর্থিক ক্ষতি, অন্যদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে অব্যাহত জ্বালানি সরবরাহে কয়লার সংকট নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে। ফলে চলমান গরমের সময় নিরবচ্ছিন্ন কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহে টান পড়তে পারে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমভি ওরিয়েন্ট অর্কিড জাহাজটি ১৭ মার্চ মাতারবাড়ী চ্যানেলে প্রবেশ করে। ওই জাহাজে আমদানি করা ৬৩ হাজার টন কয়লার মধ্যে ২২ হাজার ৩৫০ টন কয়লা আনলোড করা হয়। একপর্যায়ে কয়লার মান প্রশ্নে আপত্তি উঠলে খালাস বন্ধ করে জাহাজটিকে বহির্নোঙরে পাঠানো হয়। এরপর কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) চালানটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
সেই থেকে কয়লা বোঝাই জাহাজটি বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সিপিজিসিবিএল। যে কারণে উভয় সংকট দেখছেন অনেকে। একদিকে কয়লার ভবিষ্যৎ, অন্যদিকে প্রত্যেক দিনেই বাড়ছে আটকে থাকা জাহাজের জরিমানা। ইতোমধ্যেই ১ মিলিয়ন ডলারের মতো জরিমানা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত যদি তৃতীয় পক্ষের ল্যাব পরীক্ষায় গুণগতমান ঠিক থাকে তাহলেও সংকট দেখা দিতে পারে। তেমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ড্যামারেজ চার্জ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিপিজিসিবিএলকে বহন করতে হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতি দেড় মাস ঝুলিয়ে রাখা সিদ্ধান্তহীনতার বহির্প্রকাশ। অথবা অদৃৃশ্য কোনো কারণে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে না সিপিজিসিবিএল।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোনো পণ্যের মান নিয়ে দুই পক্ষ যখন দুই ধরনের তথ্য দাবি করে, তখন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়ানো যায়। বাংলাদেশ চাইলে সহজেই বুয়েট কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারে। অন্যথায় সরবরাহকারী যদি আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেখানে ক্ষতির শিকার হতে পারে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিপিজিসিবিএল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল হক বলেন, যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কয়লা সরবরাহ করত তারা ওই নির্দিষ্ট চালানটি ছাড়া বাকি কয়লা সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, ওই জাহাজটির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। আশা করছি শিগগিরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম