গভীর রাতে বাসায় লুটপাট ও চাঁদা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গভীর রাতে বাসায় লুটপাট ও চাঁদা দাবি

গভীর রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দরজা ভেঙে বাসায় লুটপাট, ভাঙচুরের অভিযোগে কলাবাগান থানার ওসি ও দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। তারা হলেন ওসি মোক্তারুজ্জামান, দুই এসআই বেলাল ও মান্নান। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বাসার মালিক বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল ওয়াদুদকে ১০ মামলায় ফাঁসানের হুমকি দিয়ে কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে। আব্দুল ওয়াদুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রবিবার তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে ডিএমপি।

ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, গত ২৯ এপ্রিল গভীর রাতে কলাবাগানের একটি বাসায় ‘মবের’ ঘটনা ঘটেছিল। সেটা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ওই তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে ডিএমপির অন্য সূত্র জানায়, অভিযোগকারী ব্যক্তির বাসায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যাতায়াত ছিল। তাই তার বাসায় স্থানীয় লোকজন ও কলাবাগান থানার পুলিশ গিয়েছিল। স্থানীয়রা বাসায় ভাঙচুর চালায়। কলাবাগান থানার ওসি ওই বাসার মালিককে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন।

রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপির সদর দপ্তর। তদন্তের স্বার্থে প্রথমে তাদের প্রত্যাহার করে রমনা বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। তারপর ডিএমপি থেকে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ডিএমপি কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগে আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গত ২৯ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান থানার এসআই বেলালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ও ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী আমার বাড়িতে জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। আমার ম্যানেজার ৯৯৯ এ ফোন করলে ঘটনাস্থলে কলাবাগান থানার পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল টিমের দুটি গাড়িও আসে। ম্যানেজার দেখতে পান, কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান নিউমার্কেট ও শাহবাগের টহল টিমকে চলে যেতে বলেন। শাহবাগ ও নিউমার্কেটের টহল টিমকে সংবাদ দেওয়ায় আমার ভাড়াটিয়া লাল মিয়া ও নাইট গার্ড লুৎফরকে ওসি পুলিশের গাড়িতে তুলতে নির্দেশ দেন।

পুলিশ সদস্যরা তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার সময় আমি কলাবাগান থানার ওসিকে ফোন দিই। তিনি আমাকে পুলিশের সঙ্গে যেতে বলেন। উপায়ন্ত না দেখে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এসআই বেলাল ও মান্নান আমাকে ধাক্কা মেরে আবার ঘরের ভেতরে টেনে নেয়। তারা আমার কাছে কী কী অস্ত্র আছে জানতে চায়। কিছুক্ষণ পর মান্নান আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে এক কোটি টাকা দিতে পারলে আমার থানায় যেতে হবে না। যদি টাকা না দিই আমার বিরুদ্ধে ১০টা মামলা হবে। অনেক দেনদরবারের পর দুই লাখ টাকা এসআই বেলাল ও মান্নানের হাতে তুলে দিই। ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে বাকি টাকা দেওয়ার শর্তে তিনজন সিভিল ড্রেস পরা ব্যক্তিকে আমার পাহারায় রেখে যায়। পুলিশ কম্পিউটারের পিসি, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্স নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টাব্যাপী অভিযানটি বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখভাল করেন ওসি মোক্তারুজ্জামান। 

এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।