পশুর দামে থাকবে স্বস্তি, পূরণ হবে চাহিদাও

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
পশুর দামে থাকবে স্বস্তি, পূরণ হবে চাহিদাও

চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদুল আজহা মানেই পছন্দের পশু কোরবানি করা। কয়েক বছর ধরে দেশীয় খামারে পালিত পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশি খামারিদের কথা মাথায় রেখে এবং দামের বিষয়টি চিন্তা করে ঈদুল আজহার সম্ভাব্য চাহিদা ও প্রস্তুতকৃত পশুর পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাতে দেখা গেছে, চাহিদার তুলনায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি পশু বেশি রয়েছে।

খামারিদের মতে, চাহিদার তুলনায় বেশি থাকলে পশুর দাম বাড়ানোর সুযোগ কম থাকে। তবে তাদের দাবি, পশুর দাম বাড়ে মূলত হাটে পৌঁছানো পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি এবং গোখাদ্যের দামের ওপর। চাঁদা ঠেকাতে সরকার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছে, অন্যদিকে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাও ঘটেনি। তাই দামের ব্যাপারে এবার ক্রেতারা স্বস্তি পাবেন বলেই মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে আল-আমিন অ্যাগ্রোভেটের মালিক আলী আজম মো. শিবলী আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দেশে ছোট-বড় অনেক খামার তৈরি হয়েছে। এখন যে পরিমাণ পশু লালন-পালন করা হয়, তাতে বাইরে থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হয় না। পশুখাদ্যের দাম নিয়ে এবার যেহেতু খুব বেশি অভিযোগ নেই, তাই ক্রেতারা নিজেদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই পছন্দের পশু কিনতে পারবেন বলে মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র খামারিরা সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে। অতীতে দেখা গেছে সরকার বলার পরও চোরাই পথে ভারত থেকে গরু আসত। এটা বন্ধ করতে না পারলে দেশি খামারিরা বিপুল লোকসানের মুখে পড়বে। আর পথে পথে চাঁদা বন্ধ করতে পারলে দাম বাড়ানোর সুযোগ কমে যাবে।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতিসহ সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করছে মন্ত্রণালয়।

বিভাগীয় পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সর্বোচ্চ সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২০২টি। চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি। তাই এ বছর ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু আমদানি করার প্রয়োজন দেখছে না মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, এ বছর কোরবানিযোগ্য ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি পশু রয়েছে। যা চাহিদার চেয়ে ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি বেশি।

গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ চলাচল বা পরিবহন নিশ্চিত করতে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আমরা মোটামুটি অনেক প্রস্তুতি নিচ্ছি। সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে গবাদিপশুর বাজার স্থিতিশীল থাকে। খামারিরা বছরের একটা সময় ইনকামের জন্য যে কাজটা করে সেটা যেন ঠিক থাকে। অন্যদিকে যারা কোরবানি দেবেন পশুর দাম যেন তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা বলেছি এ বছর গবাদিপশু আমদানি করার প্রয়োজন নেই। অবৈধ পথে কোনো পশু যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করব। দেশের খামারিরা যা উৎপাদন করেন তাই যথেষ্ট। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে।

সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে উপদেষ্টা বলেন, চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে, সে জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি, সেখানে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।