৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়ছে

২০২৫-২৬ অর্থবছরে করবহির্ভূত খাত

আবু আলী
০৪ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়ছে

প্রত্যাশা অনুসারে বাড়ছে না রাজস্ব আয়। এজন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করবহির্ভূত উৎস থেকে আয় বাড়াতে চায় সরকার। আগামী অর্থবছরে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে চায়, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে করবহির্ভূত খাত থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে সরকারের। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।

জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে- আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও শুল্ক। এ উৎসগুলো থেকে আয় সংগ্রহের দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এর বাইরেও অন্যতম একটি খাত রয়েছে, যা করবহির্ভূত প্রাপ্তি বা নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) নামে পরিচিত।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, এনটিআর থেকে ভালো রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এ ব্যাপারে সংস্থাগুলোর যেমন অসহযোগিতা আছে, মন্ত্রণালয়গুলোরও তেমন তাগিদ নেই। বিষয়টি নিয়ে অর্থ বিভাগ অসন্তুষ্ট। কারণ অন্য মন্ত্রণালয় শুধু অর্থ বরাদ্দ পেতে চায়, অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে মনোযোগী সরকার।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও এসডিএফের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আমাদের সময়কে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা বলে আসছি করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়ে। কিন্তু সেদিকে কোনো উন্নতি দেখছি না। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে; কিন্তু সেখান থেকে সরকার আয় পাচ্ছে না। এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, করবহির্ভূত উৎস থেকে রাজস্ব আয় সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম আদায় হয়ে থাকে।

ড. আবদুল মজিদ বলেন, জাতীয় বাজেটে করবহির্ভূত এবং নন-এনবিআর উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা তুলনামূলক কম দেওয়া হয়। অথচ এসব খাত থেকে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক করে এখান থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণের সুযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে আয় বাড়াতে হবে। সরকারি ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়তি লভ্যাংশ পাওয়া গেলে এনবিআরের ওপর লক্ষ্যমাত্রা কমবে। এতে জনগণের ওপরও করের বোঝা কমার সুযোগ আসবে। এ বিষয়গুলোতে আরও নজর দিতে হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, সেবা মাসুল তিন বছর পরপর অথবা প্রয়োজনের নিরিখে যথাসময়ে হালনাগাদ হবে। তবে সেগুলো করা হবে সেবা দেওয়ার খরচ, জীবনযাত্রার মান, মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় রেখে।

জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২ জুন টেলিভিশনের পর্দায় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাতে এনটিআর থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের কথা বলা থাকবে। তবে মাসুল বৃদ্ধির কথা বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ থাকবে না।

বিধি মোতাবেক, করবহির্ভূত খাতের মধ্যে একটি বড় উৎস হলো লভ্যাংশ ও মুনাফা। ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে সরকার লভ্যাংশ ও মুনাফা পায়। পাশাাপাশি সরকার, সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন আর্থিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও হাট-ঘাট ভাড়া ও ইজারা দিয়ে হাজার কোটি টাকা, টোল ও লেভি থেকে আরও হাজার কোটি টাকা, মূলধন রাজস্ব অর্থাৎ পুরনো গাড়ি বা আসবাব নিলামে বিক্রি থেকে রাজস্ব পায়।

এর বাইরে আইন ও নিয়মনীতির পরিপন্থি বিভিন্ন কাজের জন্য সরকার জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ করে প্রতিবছর কিছু অর্থ আয় করে। সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে দেওয়া সেবার বিপরীতে আয় করে। যেমন আমদানি-রপ্তানি সনদের মাসুল, কোম্পানি নিবন্ধন মাসুল, বীমা প্রিমিয়াম, সমবায় সমিতিগুলোর নিরীক্ষা মাসুল, নিবন্ধন ও নবায়ন মাসুল ইত্যাদি। ফলে সরকারি এসব সেবা পেতে আগামী অর্থবছরে মাসুল বেশি দিতে হবে।