ঘাটতির চাপ এডিপিতে

আবু আলী
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ঘাটতির চাপ এডিপিতে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অযৌক্তিকভাবে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হবে না। বাস্তবসম্মত উপায়ে এমনভাবে বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এ বাজেট অগ্রাহ্য করতে না পারে। বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দ কমিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আগামী বাজেটে থাকবে না কোনো নতুন প্রকল্পও। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন এবং সেই অনুপাতেই ২০২৫-২৬ র্অবছরের বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজেটে বিরাট বিরাট মনুমেন্টাল (লোক দেখানো) প্রকল্প নেওয়া হলো, কিন্তু সময়মতো বাস্তবায়ন হলো না- এগুলো প্রকৃতপক্ষে উপকারে আসে না। তাই আগামী বাজেটে এ ধরনের অযৌক্তিক বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হবে না। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কাজ হবে না। বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হবে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে যাওয়া। তবে বর্তমান সরকারের সংক্ষিপ্ত সময়ে পুরোপুরি এ কাজ করা সম্ভব হবে না। এ সময়ের মধ্যে অর্থনীতিতে কিছু সংস্কার আনা হবে। বাজেটে সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকবে।

জানা গেছে, কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় অর্থ সংকটে ভুগছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য বাজেট বাস্তবায়নের গতিও মন্থর। এ ছাড়া চড়া মূল্যস্ফীতির কারণে প্রবৃদ্ধিও কমবে চলতি অর্থবছর শেষে। এ জন্য বাজেট ঘাটতি কমাতে উন্নয়ন বরাদ্দ কাটছাঁট করা হচ্ছে। একইভাবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকল্প ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল এনবিআরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। যদিও সংস্থাটি বাজেট ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনার চাপ দিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। সরকার অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে কৃষি ও খাদ্য খাতে ভর্তুকি কমানো সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, চলতি বছর ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার। আসছে বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজেটের আকারও ৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ২০২৫-২৬ বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জনকে নয় বরং গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে। তবে সম্প্রতি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা ফিরেছে, যা বৈদেশিব মুদ্রার রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রাব্যবস্থা এবং সরবরাহ পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে করে রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।

অন্যান্য বছরের মতো উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনকে প্রধান লক্ষ্য না করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই আসছে বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য চলমান আর্থিক সংকটের ধাক্কা সামলাতে আসছে (২০২৫-২৬) বাজেটের আকার ছোট করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ। মেয়াদের সাত মাসে এসে অন্তর্বর্র্তী সরকার অনূভব করছে, এবারের বাজেটটা চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায়ও ছোট করা হলে আর্থিক চাপ কমবে। তাতে অর্থের সংস্থান পেতে এবং বাজেট বাস্তবায়ন করতে অপেক্ষাকৃত কম বেগ পেতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। শুধু তাই নয়, আকার ছোট হলে বাজেট ঘাটতি কমাতেও সহায়ক হবে বলে মনে করে অর্থবিভাগ।

এদিকে, আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় চলমান ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। একইভাবে কৃষি খাতকে উৎসাহিত করতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। আবার শিল্প খাতকে সুরক্ষা দিতে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য বান্ধব করতে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হবে।