কুয়েট ভিসি-প্রো ভিসিকে অব্যাহতির প্রক্রিয়া শুরু
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত
কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকগণের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দাবি আদায়ের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে উত্তাল হয়ে পড়ছে শিক্ষাঙ্গন। তাদের দাবিগুলো কর্তৃপক্ষ শুরুতে আমলে না নেওয়ায় বড় আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। এই আন্দোলন অন্য ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে কয়েকদিন ধরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং সুনামগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ^াস, কমিটি গঠন, ক্লাসে ফেরার আহ্বানÑ কোনোটাই কাজে আসছে না। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের কথা ভেবে আন্দোলনকারী এবং কর্তৃপক্ষ উভয়কেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানের পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।
শিক্ষাবিদ ড. মোজাম্মেল হক চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, চলমান ছাত্র আন্দোলনগুলোর যৌক্তিকতা আছে। তবে প্রশাসনের কাজ হচ্ছে ছাত্রদের সঙ্গে বসে শুরুতেই সমানের উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু সেটি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের আন্দোলন একদিনে এই পর্যায়ে আসেনি। অনেক দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়েছে। এখন ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে। কেন আমাদের শীর্ষ প্রশাসন শুরুতে হস্তক্ষেপ করেনি? পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের দাবিও অনেক দিনের। এখন তারা বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। আগেই দায়িত্বশীলদের এসব বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। এখন সমাধানের জন্য আমি বলবÑ যৌক্তিক সমাধানের জন্য উভয়পক্ষকে ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলে, স্পষ্ট ঘোষণা যখন পাবেÑ তারা আন্দোলন থেকে সরে শিক্ষায় মনোনিবেশ করবে। আমরা সেখানটায় অনেকটা দেরি করে ফেলছি।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় কুয়েট ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যান শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরার। তবে উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণ না করা পর্যন্ত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানান শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার গণমাধ্যমকে বলেন, কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি কয়েকদিনের মধ্যে সমাধান হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অপরাধ সংঘটিত করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আইন মেনেই সবকিছু করার চেষ্টা করা হবে। শিক্ষার্থীদেরও স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসতে হবে। ছাত্রদের বহিষ্কার আদেশ ও মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের মধ্য সংঘর্ষ হয়। এতে অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থার মধ্যে ১৪ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম ৪ মে ও আবাসিক হলগুলো ২ মে খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন দুপুরে একের পর এক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। সেই সঙ্গে উপাচার্যকে অপসারণের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ২১ এপ্রিল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
চাপ দিয়ে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে মানবে না শিক্ষক সমিতি : এদিকে চাপ দিয়ে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে তা মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা না বলায় হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে দুপুর ১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এতে আমরা ব্যথিত হয়েছি। অল্প কয়েকজন মিছিল করলে সাংবাদিকরা নিউজ করে যে কুয়েট উত্তাল, অথচ কুয়েটে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রাজনৈতিক ট্যাগ দিচ্ছে, যা দুঃখজনক। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর করেছে, গায়ে থুতু দিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত ও তাদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে; আমরা এসবের বিচার দাবি করছি।
কুয়েটে খুলছে আবাসিক হল: কুয়েটের আবাসিক হল ২ মের পরিবর্তে গতকাল খুলে দেওয়া হয়েছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভুঞা।
৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার: গতকালের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার আদেশটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহাদুজ্জামান শেখ। ?দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাছুদের সভাপতিত্বে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বসে কর্তৃপক্ষ। সভায় আগামী ৪ মে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।
পদত্যাগ না করলে মার্চ টু কুয়েটের হুমকি: কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে মার্চ টু কুয়েট কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা। গতকাল বিকেলে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে ভিসি চত্বরে গিয়ে নানা স্লোগান দেয়। মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
শাবিপ্রবিতে অনশন: কুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ও কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থী। দুপুর ১টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তারা অনশন শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের অসুস্থতার কথা চিন্তা করে এদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী অনশনস্থলে এসে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন। তবে সাড়া দেননি শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তারা।
প্রতীকী অনশনে শেকৃবি শিক্ষার্থীরা: কুয়েটে চলমান একদফার প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতীকী অনশনে বসেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা স্ট্যান্ডের সামনে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা। একই সঙ্গে ক্লাস পরীক্ষাও বর্জন করেছে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
ইবি শিক্ষার্থীদের অনশন: কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অনশনে বসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন যুক্ত হন।
অনশনে জাবি শিক্ষার্থীরা: কুয়েটের উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনে বসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদসংলগ্ন মহুয়া মঞ্চে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
অনশনে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা: কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে অনশনে বসেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টা থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য প্রতীকী অনশনে বসেছেন তারা। চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় বিভিন্ন কার্ড ও ফেস্টুন হাতে তারা এই প্রতীকী অনশন করেন।
কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শাটডাউন প্রত্যাহার শিক্ষার্থীদের: দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন সুনামগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে সুনামগঞ্জ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ কথা জানান। তারা জানান, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে টানা ৮ দিনের কর্মসূচি আজ সমাপ্তি করা হলো। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সপ্তাহে ছয় দিন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা, ওয়ার্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ, ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও রেজিস্ট্রার নিয়োগ, সার্জারি, মেডিসিনসহ সকল ক্লিনিক্যাল বিষয়সমূহে যথাযথ ওয়ার্ড বাস্তবায়নের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ, ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থার ঘাটতি দ্রুত সমাধান, হাসপাতালের কার্যক্রম ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করতে রোডম্যাপ অনুসরণ করা হবে। দাবি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানান তারা।
সরকারের ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ বলছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক: সরকার বরাবরই কুয়েট শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করেছে, যা শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত বলেই প্রতীয়মান হয়। অনশনরত কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের সশস্ত্র হামলা হয়। গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে এমন সশস্ত্র হামলা এবং হামলা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আমাদের বিস্মিত করেছে। হামলার ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিক মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে অবস্থান নেওয়া এক যুবদল নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। গণ-অভ্যুত্থানের সহযোগী একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এমন দায়সারা ভূমিকাও আমাদের হতাশ করেছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তড়িঘড়ি করে চিহ্নিত হামলাকারীদের নাম বাদ দিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করে। ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ ও পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগে বাধ্য করে। গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত ক্ষোভকে আমলে নিয়ে অভিভাবকসুলভ আচরণের বদলে প্রশাসন তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে অস্বীকার করেন এবং শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন এমন দাবি করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে সংহতি সংগ্রহ করেন। আবার সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ হয়ে শিক্ষকদের মানববন্ধন স্বৈরাচারী আমলের নতজানু চর্চাকেই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। অথচ হামলার দুই মাস অতিবাহিত হলেও চিহ্নিত হামলাকারীদের কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয়নি; বরং হামলার শিকার ৪২ জন ছাত্রকে স্থানী করা প্রহসনমূলক ও মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। উপরন্তু হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতের বদলে কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ ৩৭ জনকে বহিষ্কার করেছে, যা অপরাধীদের ছাড় দিয়ে অপরাধের শিকার ব্যক্তিদেরই শাস্তি দেওয়ার শামিল।