বিদেশি বিনিয়োগ আরও নিম্নমুখী
২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার গতি আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। গত বছর দেশে নিট এফডিআই এসেছে মাত্র ১২৭ কোটি ডলার, যা ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এটি আগের বছরের চেয়ে প্রায় সোয়া ১৩ শতাংশ কম। এর মধ্যে নতুন পুঁজি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। পুনর্বিনিয়োগ কমেছে ১৯ শতাংশ। আর এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে যে বিনিয়োগ করে সেটি কমেছে প্রায় দেড় শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিদেশি বিনিয়োগ কমার পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ডলার সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এই তিনটি কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ধীরগতি চলছে। আর দেশি বিনিয়োগ কমার কারণে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। কারণ দেশি উদ্যোক্তাদের মতো বিদেশিরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
দেশে মহামারী করোনার আঘাত আসে ২০২০ সালের মার্চে। তার আগেই চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশে আক্রান্ত হয়। এতে বিশ্বজুড়েই ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে। বাংলাদেশেও নিট এফডিআইয়ে বড় ধাক্কা আসে। তবে করোনার প্রকোপ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছিল। আবার ২০২২ সাল থেকে টানা পতনের ধারায় রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে দেশে নিট এফডিআই এসেছে প্রায় ১২৭ কোটি ৩ লাখ ডলার। এটি ২০২৩ সালের তুলনায় ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। ২০২৩ সালে দেশে নিট এফডিআই আসে ১৪৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৫ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশে সর্বোচ্চ ১৫৭ কোটি ডলারের নিট এফডিআই আসে। এরপর থেকে টানা তিন বছর নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। ২০২২ সালে নিট এফডিআই আসে ১৫২ কোটি ডলার।
সাধারণত তিন পদ্ধতিতে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। এগুলো হলো- নতুন পুঁজি তথা মূলধন হিসাবে, বিদ্যমান ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করে এবং এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময় বিদেশিরা মূলধন (ইক্যুইটি) হিসেবে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের নিট বিনিয়োগ করেছেন, এটি ২০২৩ সালের চেয়ে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ কম। এ সময়ে বিদেশিদের নিট পুনর্বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ২০২৩ সালের চেয়ে ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ কম। আর এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি ৪১ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে ব্যাংকিং খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট খাতে এসেছে ৪০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ ছাড়া ওষুধ ও রাসায়নিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি এবং খাদ্য খাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ কমেছে দেশীয় উদ্যোক্তাদেরও। আবার আওয়ামী লীগ আমলের ব্যবসায়ীদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। সে সঙ্গে পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকসহ আরও কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটের কারণে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রেখেছে। আবার চলমান ডলার সরবরাহ পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি চলমান রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে কয়েক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে বিনিয়োগে ধীরগতি এসেছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এখন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নেই। বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা ও অনিশ্চয়তা দুটোই রয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক নীতিতে আছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক হলে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে। তবে সবকিছুই যে ঠিক হবে, তা নয়। কারণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে জঞ্জাল রয়েছে, তা আগে দূর করতে হবে। এ সরকার যে সংস্কার হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামীতে বিনিয়োগ বাড়বে।