সরকারের ব্যাংক ঋণ দ্রুত বাড়ছে
সরকারের ব্যাংক ঋণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। আর গত জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল মাত্র সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত দুই মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ সাড়ে তিনগুণের বেশি বেড়েছে। রাজস্ব আহরণে ধীরগতি, বৈদেশিক উৎস থেকে কাক্সিক্ষত সহায়তা না আসা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরও টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যে ঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তার সবটাই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত ঋণের চাহিদা কম থাকায় এই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। সেই লক্ষ্যমাত্রা ২৭ শতাংশ কমিয়ে ৯৯ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে এখন চাহিদা বাড়তে থাকায় সরকারের ব্যাংক ঋণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আটকে রাখা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। গত ২৯ মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে যার পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম চার মাসে ছিল ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ছিল ৫৯ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ করেনি সরকার। গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি। গত ৩১ মার্চ শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৫৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এই ৯ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকার উল্টো পরিশোধ করেছে ৪১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণকে টাকা ছাপানো হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, গত ২৯ মার্চ শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে সরকারের নিট ঋণস্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৯৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা, গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে যার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ছিল ২৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।
এদিকে, গত অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে সেই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত এর বিপরীতে সরকার নিট ঋণ নেয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।